ফ্যাক্ট চেক: গুজরাটে বাংলাদেশি ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন? না, দাবিটি ভিত্তিহীন

আজতক চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, গত ২৮ জানুয়ারি গুজরাটের ভাদোদরা জেলার রাওপুরা থানার একটি আবাসন থেকে ২০ বছর বয়সী বাংলাদেশি ছাত্রী মোহনা মন্ডলের দেহ উদ্ধার হয়। তবে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়নি বরং সে আত্নহত্যা করেছিল।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: গুজরাটে বাংলাদেশি ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন? না, দাবিটি ভিত্তিহীন

প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতে আসেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পড়ুয়ারা। সম্প্রতি ভারতে পড়তে আসা এমনই এক ছাত্রীকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি পোস্ট। যেখানে ওই ছাত্রীর পাশাপাশি, একটি ঘরের ও একটি কাগজের অস্পষ্ট চিরুকুটের তিনটি ছবির সাহায্যে বানানো একটি কোলাজ শেয়ার করা হয়েছে। কোলাজটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, গুজরাটে পড়তে আসা এক বাংলাদেশি ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করেছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা।

 

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল কোলাজটি শেয়ার করে লিখেছেন, “মোহনা মণ্ডল, ২০ বছর বয়সী একজন ফার্মেসি ছাত্রছাত্রী, যে বাংলাদেশ থেকে এসে গুজরাটের M.S. University-তে পড়াশোনা করতো, তাকে হিন্দুত্ব সন্ত্রাসীরা তার ভডোদরার অ্যাপার্টমেন্টে ধর্ষণ এবং হত্যা করেছে। #IndiaOut #truth #justice” (সব বানান অপরিবর্তিত।)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি গুজরাটের ভাদোদরা জেলার রাওপুরা থানার একটি আবাসন থেকে ২০ বছর বয়সী বাংলাদেশি ছাত্রী মোহনা মন্ডলের দেহ উদ্ধার হয়। তবে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়নি বরং সে আত্নহত্যা করেছিল।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

ভাইরাল দাবির সত্যতা জানতে এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০২৫ সালের ২৯ জানুয়ারি The Indian Express-এর একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ভদোদরার এম এস বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি পড়ুয়া মোহনা মন্ডল আত্মহত্যা করেছে। তার বন্ধুদের অনুমান, অতিরিক্ত পড়াশুানার চাপের কারণেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোহনা। ঘরের ভিতরে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে। তবে সেখানে মোহনা তার মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেনি।

এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী সার্চ করলে ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি গুজরাটি সংবাদমাধ্যম Gujarat Samachar-এ এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে ভাইরাল ছবির কোলাজটি-সহ উল্লেখ করা হয়েছে, মঙ্গলবার ভাদোদরার রাওপুরার নর্মদা আবাসনে আত্মহত্যা করেছে এক বাংলাদেশি ছাত্রী মোহনা মন্ডল। সে ভাদোদরার এম.এস. বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ছিল। বাংলাদেশের মাগুরা জেলায় বাসিন্দা মোহনা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফার্মেসি নিয়ে পড়তে গুজরাটে আসে। 

Advertisement

ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২৮ জানুয়ারি মোহনার পরীক্ষা ছিল। কিন্তু সে পরীক্ষা দিতে যায়নি। তখন তার বন্ধুরা তার ভাড়ার বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে দেখে ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। এরপর তাদের সন্দেহ হওয়ায় তারা দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করলে সেখানে মোহনার দেহ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তারা স্থানীয় রাওপুরা থানায় খবর দেয়। পুলিশ এসে মোহনার দেহ উদ্ধার করে তা পোস্টমর্টেমে পাঠায় এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে। সুইসাইড নোটে মোহনা লিখেছে, "আমি যেটা করছি, আমি তা করছি কারণ আমি এটা করতে চাই। কেউ আমাকে জোর বা প্রভাবিত করেনি। অবশেষে..." পাশাপাশি ভাইরাল পোস্টে যেটি অস্পষ্ট কাগজের চিরকুট মনে হচ্ছে, Gujarat Samachar-এর প্রতিবেদনে ব্যবহৃত কোলাজ থেকে স্পষ্ট যে সেটি মোহনার সুইসাইড নোটস। তবে এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য কোনও প্রতিবেদনেই মোহনাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়নি।

এরপর বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আমরা রাওপুরা থানা এসএইচও শ্রী কে.কে. যাদবের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, "বাংলাদেশি ছাত্রী মোহনা মন্ডলকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে দাবি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মোহনা পড়াশুনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিল। সেই কারণেই সে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের তদন্ত এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও এই একই তথ্য উঠে এসেছে। আমরা বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় ইতিমধ্যেই তার দেহ বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।"

এর থেকে প্রমাণ হয় যে গুজরাটের ভাদোদরায় বাংলাদেশি ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাকে মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন দাবি-সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গুজরাটের ভাদোদরায় বাংলাদেশি ছাত্রী মোহনা মন্ডলকে ধর্ষণ করে খুন করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা।

ফলাফল

পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মোহনা মন্ডলকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়নি বরং সে আত্নহত্যা করেছিল।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement