ফ্যাক্ট চেক: চাঁদা না দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে হিন্দু ব্যবসায়ীকে মারধর? না, নিগৃহীত ব্যক্তি মুসলিম

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিটির নাম মোঃ দ্বীন ইসলাম ঘরামী এবং তিনি হিন্দু নয় বরং মুসলিম। ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা বাজারে একটি দোকানে চুরির চেষ্টার অভিযোগে তাকে মারধর করা হয়েছিল।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: চাঁদা না দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে হিন্দু ব্যবসায়ীকে মারধর? না, নিগৃহীত ব্যক্তি মুসলিম

বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনার দেশ থেকে পালানোর পর সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে একাধিক হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও। যেখানে কোনও একটি বাজারে প্রকাশ্য রাস্তার উপরে এক ব্যক্তিকে মারধর করছেন অপর এক ব্যক্তি। অন্যদিকে সেখানে উপস্থিত কয়েকজনকে নিগৃহীত ব্যক্তিকে না মারার অনুরোধ বা বাঁচানোর চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে।

ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, অতিরিক্ত চাঁদা না দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের পিরোজপুরে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “বাংলাদেশের পিরোজপুরে হিন্দু ব্যবসায়ীকে অমানুষি নির্যাতন করছে বাংলাদেশের বি এন পি, হিন্দু ব্যবসায়ীর অপরাধ ছিল চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না দেয়া। মা গো মা এই আর্তনাদ কমরেড আপনাদের কানে ঢোকে না!!!!!!!!?।”

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, নিগৃহীত ব্যক্তিটির নাম মোঃ দ্বীন ইসলাম ঘরামী এবং তিনি হিন্দু নয় বরং মুসলিম। ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা বাজারে একটি দোকানে চুরির চেষ্টার অভিযোগে তাকে মারধর করা হয়েছিল। 

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

ভাইরাল ভিডিওটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা সেটির ৩ ও ৮ সেকেন্ডে দুটি দোকানের ব্যানার দেখতে পাই। সেই ব্যানার থেকে আমরা জানতে পারি ভিডিওটি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা নামক কোনও স্থানের। এরপর ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে উক্ত সূত্র ধরে এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল আলফাডাঙ্গার এক প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য শেখ রাজু নামক এক ব্যক্তির ফেসবুক প্রোফাইলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়েছে, “ফরিদপুর আলফাডাঙ্গা পৌরসভায় পুরাতন পরিবহন বাস কাউন্টারের পাশে আলমের দোকানে চুরি করতে গিয়ে হাতানাতে ধরা পড়েছে।”

Advertisement

এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে এই সংক্রান্ত পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে গত ৩০ এপ্রিল অন্য একটি ফেসবুক প্রোফাইলে ভিন্ন ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল থেকে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। পাশাপাশি সেই ভিডিওতে আমরা ভিন্ন একটি ক্লিপ দেখতে পাই যেখানে ভিডিওর নিগৃহীত ব্যক্তিকে সেখানে উপস্থিত অন্য একজনকে নিজের পরিচয়পত্র দিতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানেও এই একই তথ্য উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, “ফরিদপুর আলফাডাঙ্গা পুরাতন পরিবহন বাস কাউনটারে পাশের আলম ভাইয়ে দোকানে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে. কিছু দিন আগেও চুরি সংক্রান্ত কয়েকটি  জয়গায় তাকে দেখা যায়।” পাশাপাশি এই একই প্রোফাইল থেকে এই ঘটনার আরও দুটি ভিডিও শেয়ার করে উল্লেখ করা হয়েছে, "আলফাডাঙ্গা বাজারে মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ধরা খেলো এই ব্যক্তি।"  

এরপর বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমরা আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “ভিডিওতে যে ব্যক্তিকে মারধর করা হচ্ছে তিনি হিন্দু নয় বরং মুসলিম এবং তার নাম মোঃ দ্বীন ইসলাম ঘরামী। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল নিগৃহীত দ্বীন ইসলাম বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আলম মিঞা নামক এক ব্যক্তির দোকান থেকে মোবাইল চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে। তখন দোকানের মালিক আলম মিঞা অভিযুক্ত দ্বীন ইসলামকে মারধর করেন। তবে পরবর্তীতে স্থানীয়দের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।” 

পাশাপাশি আরাফাত শামীম প্রমাণ স্বরূপ আমাদের অভিযুক্ত দ্বীন ইসলাম ঘরামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি ছবিও পাঠিয়েছেন। যা থেকে অভিযুক্তের পরিচয় সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারি। একই সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে উপরে উল্লেখিত প্রেসক্লাব আলফাডাঙ্গার কার্যনির্বাহী সদস্য শেখ রাজুর সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ করলে তিনিও আমাদের এই একই তথ্য প্রদান করেন। নিচে অভিযুক্ত দ্বীন ইসলাম ঘরামীর জাতীয় পরিচয়পত্রটি দেখা যাবে।

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, অতিরিক্ত চাঁদা না দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে মারধর করার দাবিটি মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

অতিরিক্ত চাঁদা না দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের পিরোজপুরে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে মারধর করা হচ্ছে। 

ফলাফল

নিগৃহীত ব্যক্তিটির নাম মোঃ দ্বীন ইসলাম ঘরামী এবং তিনি হিন্দু নয় বরং মুসলিম। ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা বাজারে একটি দোকানে চুরির চেষ্টার অভিযোগে তাকে মারধর করা হয়েছিল।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement