

বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লির বিস্ফোরণকে সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসাবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর এই আবহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যাতে কোনও একটি স্থানে আটককৃত কিছু বস্তাবন্দি জিনিসের সামনে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মীকে টহল দিতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, গাজিয়াবাদে বজরং দলের এক কর্মীর বাড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।
পাশাপাশি ভিডিও-র সঙ্গে থাকা অডিওতে বলা হচ্ছে, বজরং দলের কর্মীর বাড়িতে অভিযানের সময় প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক, বোমা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “ডবল ইঞ্জিন রাজ্য উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে #বজরং_দলের এক মুল্লার বাড়িতে রেড করে প্রচুর পরিমাণে বি*স্ফো*রক দ্রব্য উদ্ধার করেছে পুলিশ , কিন্তু মালিক পক্ষের দাঙ্গাবাজ হওয়ার জন্য গোদি মিডিয়ার 🐕 গুলো ঘেউ ঘেউ করছে না।” (সব বানান অপরিবর্তিত)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনও ঘটনার নয়। এমনকি এটা কোনও বজরং দলের কর্মীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা সামগ্রীও নয়।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর ‘জার্নালিস্ট আনন্দ’ নামক এক ফেসবুক প্রোফাইলে এই একই দাবি-সহ একই ভিডিও পাওয়া যায়। আরও বেশ কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রায় একই সময়ে ভিডিও ক্লিপটি শেয়ার করে এটিকে এটি গাজিয়াবাদের লোনি থানা এলাকার ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনও ঘটনার নয়, বরং কমপক্ষে তিন বছরের পুরনো।

এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে দৈনিক ভাস্করে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজিয়াবাদের ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যা খবর ছড়ানোর কারণে পুলিশ ‘@YasmeenKhan_786’ ইউজার নামের একটি টুইটার হ্যান্ডেলের ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। পুলিশ আসলে রিজওয়ান নামক এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে অবৈধ আতশবাজি উদ্ধার করে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয় পুলিশ বজরং দলের একজন সদস্যের বাড়ি থেকে আতশবাজি উদ্ধার করেছে।

এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান চালালে ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর গাজিয়াবাদ পুলিশের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, লোনি থানার পুলিশ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, আতশবাজি-সহ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
थाना लोनी पुलिस द्वारा अवैध पटाखा निर्मित करने वालाे 01 अभियुक्त को मय भारी मात्रा मे अद्धनिर्मित/निर्मित विस्फोटक पटाखा सामग्री सहित गिरफ्तार किया गया।@Uppolice pic.twitter.com/p5ne1uTjAa
— POLICE COMMISSIONERATE GHAZIABAD (@ghaziabadpolice) October 18, 2022
পাশাপাশি, গাজিয়াবাদ পুলিশের তরফে একটি বিবৃতিও এই এক্স পোস্টের সঙ্গে যোগ করা হয়। এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অবৈধ আতশবাজির খোঁজ পাওয়ার পর পুলিশ ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর ঘটনাস্থলে পৌঁছয় এবং অবৈধ আতশবাজি-সহ রিজওয়ান নামক একজনকে গ্রেপ্তার করে। অন্যদিকে, রিজওয়ানের চার সহযোগী, দিলশাদ, নৌশাদ, আকাশ এবং গৌরব ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে ছিল আতশবাজি, নোজেল, বারুদ এবং একটি আতশবাজি তৈরির মেশিন।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, দিল্লি বিস্ফোরণের পর ২০২২ সালে অবৈধ আতশবাজির বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযানের পুরনো ভিডিও মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর দাবি-সহ শেয়ার করা হচ্ছে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গাজিয়াবাদে বজরং দলের এক কর্মীর বাড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়। বরং এটি ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের ঘটনা। সেই সময় গাজিয়াবাদের লোনি থানার পুলিশ অবৈধ আতশবাজি বিরোধী অভিযানে রিজওয়ান নামক একজনকে গ্রেফতার করেছিল।