ফ্যাক্ট চেক: লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানল কি পাখিদের মাধ্যমে এ বার নিউইয়র্কেও ছড়াচ্ছে?

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল কোলজের পাখি দুটির ছবির সঙ্গে সম্প্রতি ক্যালিফর্নিয়ার দাবানলের কোনও সম্পর্ক নেই। কোলজের নিচের ছবিটি ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়াতে তোলা হয়েছিল। অন্যদিকে কোলজের উপরের ছবিটি ২০২১ সাল থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানল কি পাখিদের মাধ্যমে এ বার নিউইয়র্কেও ছড়াচ্ছে?

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দাবানলে পুড়ছে আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলস। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর তথ্য অনুসারে প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত ক্যালিফর্নিয়ার এই শহরটিতে দাবানলের কারণে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি ১ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষকে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থনে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানল সংক্রান্ত দুটি ছবির একটি কোলাজ। কোলাজের উপরের ছবিটিতে একটি পাখিকে কোনও জ্বলন্ত স্থান থেকে পায়ে করে একটি বস্তু নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে যাতে আগুন জ্বলছে। অন্যদিকে কোলাজের নিচের ছবির পাখিটিকে জ্বলন্ত স্থান থেকে উড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। 

কোলাজটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ক্যালিফর্নিয়ার মতোই নিউইয়র্ককে ধ্বংস করতে পাখি দুটি লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানল থেকে আগুন সংগ্রহ করে নিউইয়র্ক শহরে নিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল কোলজটি শেয়ার করে লিখেছেন, “আলহামদুলিল্লাহ! নিউইয়ার্কে আল্লাহর বা*হি*নী নেমে গেছে  কেলোফোরনিয়া থেকে আ*গু*ন কি ভাবে নিউইয়ার্কে যাচ্ছে জাস্ট এটা মাত্র হেডলাইন।” (সব বানান অপরিবর্তিত।)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল কোলজের পাখি দুটির ছবির সঙ্গে সম্প্রতি ক্যালিফর্নিয়ার দাবানলের কোনও সম্পর্ক নেই। কোলাজের নিচের ছবিটি ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়াতে তোলা হয়েছিল। অন্যদিকে কোলজের উপরের ছবিটি ২০২১ সাল থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

প্রথমত, ভাইরাল পোস্টের দাবিটি সন্দেহজনক। কারণ কোলাজটি শেয়ার করে সেখানে দাবি করা হয়েছে পাখিদের মাধ্যমে লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানল থেকে আগুন নিউইয়র্কে ছড়াচ্ছে। অথচ, লস অ্যাঞ্জেলস আমেরিকার পশ্চিম প্রান্তে এবং নিউইয়র্ক আমেরিকার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। আর এই শহর দুটির মধ্যের দূরত্ব প্রায় ৪,৫০০ কিমি। কোনও পাখির মাধম্যে বাহিত হয়ে এত দূরত্ব অতিক্রম করে আগুন ছড়ানো কার্যত অসম্ভব। তবে বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতে এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে আমরা এমন কোনও তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি যা থেকে এই দাবির সত্যতা প্রমাণ হয়। যা থেকে অনুমান করা যায় ভাইরাল কোলজের ছবিটি অন্য কোনও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। সেই সঙ্গে এই আগুনের প্রভাব নিউইর্য়কেও ছড়িয়েছে, এমন উল্লেখও কোথাও পাওয়া যায়নি। 

Advertisement

এরপর ভাইরাল কোলাজে থাকা পাখি দুটির ছবির রহস্য জানতে আমরা উভয় ছবি নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমাদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। 

কোলাজের উপরের ছবি: কোলাজের উপরের ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে আমরা লক্ষ্য করি যে সেটি ২০২১ সাল থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে। ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর Amazing World Reality-সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছবিটি শেয়ার করে সেটিকে উত্তর অস্ট্রেলিয়ার 'ফায়ারহক্স'-এর দৃশ্য দাবি করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, চিল বা ওই জাতীয় পাখিদের দ্বারা অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গলে অনেক সময় আগুন লেগে যায়, এই ঘটনাকে 'ফায়ারহক্স' বলা হয়।

কোলাজের নীচের ছবি: কোলাজের নীচের ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে এই একই ছবি-সহ ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আমেরিকান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ছবির পাখিটি একটি কালো রঙের চিল। আর এই ছবিটি উত্তর অস্ট্রেলিয়ার একটি দাবানলের কাছে তোলা হয়েছিল। পাশাপাশি সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে,  চিত্রগ্রাহক বব গসফোর্ডের তোলা এই ছবিটি দেখে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন দাবানলের কারণে জ্বলন্ত জঙ্গলে ঘুরে পাখিটি তার খাবর সংগ্রহ করছে।

 

এর থেকে প্রমাণ হয় যে পুরনো অসম্পর্কিত পাখির ছবির কোলজ লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলের সঙ্গে যুক্ত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যে দাবি-সহ শেয়ার করা হচ্ছে।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

ছবিতে থাকা দু'টি ছবির মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে কী ভাবে লস অ্যাঞ্জেলেসে লাগা আগুন পাখিদের দ্বারা নিউইর্য়কেও ছড়িয়ে পড়ছে।

ফলাফল

ভাইরাল কোলাজের পাখি দুটির ছবির সঙ্গে সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলের কোনও সম্পর্ক নেই। নীচের ছবিটি ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়াতে তোলা হয়েছিল। অন্যদিকে উপরের ছবিটি ২০২১ সাল থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement