রবিবারের সকাল হোক বা কোনও অনুষ্ঠান, প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই মুরগির মাংস বা চিকেনের কোনও না কোনও পদ থাকবেই। সেই মাংসই কিনা পচা! সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে এমনই একটি ভিডিয়ো বা এবিপি আনন্দের খবরের একটি ভিডিয়ো। যেখানে শহরের রেস্তোরাঁয় পচা মুরগির মাংসের রমরমা কারবারের কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। নিউটাউনের হানা চালিয়ে কীভাবে পুলিশ সেই কারবারের পর্দা ফাঁস করেছে তাও ওই ভিডিয়োতে বলা হচ্ছে।
ভিডিয়োটি ফেসবুকে পোস্ট করে একজন লিখেছেন, "সস্তার বিরিয়ানী, বড়ো বড়ো চিকেন পিস, কে FC fried চিকেন যারা খাচ্ছেন তারা দেখুন। ভাগাড়ের মাংসের পর আবার নতুন কান্ড। পচা মাংসের রমরমা কারবার।" (পোস্টের বানান অপরিবর্তিত)
যদিও ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক টিম তদন্ত করে দেখেছে যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিয়োটি পাঁচ বছর পুরনো। সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতা শহরে পচা মুরগির মাংস বিক্রির মতো কোনও বড় ঘটনা ঘটেনি।
কীভাবে এগলো অনুসন্ধান?
তদন্তের শুরু ইন্টারনেটে কিওয়ার্ড সার্চ করে, সাম্প্রতিক সময়ের কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোনও পচা মুরগি বিক্রির খবর আমাদের নজরে পড়েনি।
এরপর ইউটিউবে কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল এবিপি আনন্দের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড হওয়া একটি খবর আমাদের নজরে পড়ে। সেই খবর থেকে জানা যায়, দমদমে এয়ারপোর্টের আড়াই নম্বর এলাকার একটি দোকানে পচা মাংস ডেলিভারি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। একটি দোকানে ৭০ কেজি মাংস ডেলিভারি দেওয়ার সময় পচা গন্ধ বের হলে, স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। এক যুবককে আটক করে তাঁরা পুলিশের হাতে তুলে দেন।
একই দিনে এবিপি আনন্দের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড হওয়া আরও একটি খবর দেখা যায়। সেখান থেকে জানা যায়, নিউটাউনের আটঘড়া এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে কয়েক টন পচা মুরগির মাংস উদ্ধার করেছেন পুলিশ আধিকারিকরা। দুটো ভিডিয়োর তথ্য ও ভিজ্য়ুয়ালের সঙ্গে বর্তমানে ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিয়োটির মিল পাওয়া যায়।
এরপর আরও সার্চ ২০১৮ সালের ৩ মে Ananda Bazar ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খর থেকে জানা যায়, ভাগাড়ের মাংস কাণ্ডের মূল পাণ্ডা বিশ্বনাথ ঘড়াই ওরফে বিশুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
আর ২৪ মে পচা মুরগির মাংস কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত কওসর আলি ঢালিকেও গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাকে উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
একই দিনে একই খবর প্রকাশিত হয়েছিল, News18 Bangla, ABP Ananda, The Wall-সহ একাধিক সংবাদ মাধ্যমে।
এছাড়া ভাইরাল ভিডিয়োটিতে এবিপি আনন্দের যে লোগোটি দেখা যাচ্ছে, সেটাও ওই চ্যালেন কর্তৃপক্ষ বদলে ফেলেছে। ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের হলে ভিডিয়োতে সেই নতুন লোগো দেখা যেত।
ফলে এখন নিশ্চিত ভাবে এটা বলা যায় যে, সাম্প্রতিক সময়ে পচা মুরগি বিক্রির মতো কোনও ঘটনা শহর কলকাতা বা তার পার্শ্ববর্তী কোনও এলাকায় ঘটেনি। ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিয়োটি পাঁচ বছর পুরনো একটি ঘটনার।
সকলের কাছে অনুরোধ, অযথা কোনও গুজব ছড়াবেন না বা গুজবে কান দেবেন না। কোনও খবর বা ঘটনা শুনলে বা দেখতে, তা তলিয়ে নিন। একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের ভূমিকা পালন করুন।
এবিপি আনন্দে সম্প্রচারিত খবরের ভিডিয়ো পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে ফের শহরে রমরমিয়ে চলছে পচা মুরগির মাংসের ব্যবসা।
সাম্প্রতিক সময়ে পচা মুরগি বিক্রির মতো কোনও ঘটনা শহর কলকাতা বা তার পার্শ্ববর্তী কোনও এলাকায় ঘটেনি। ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিয়োটি পাঁচ বছর পুরনো একটি ঘটনার।