scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: মুর্শিদাবাদের নির্মীয়মান রেল সেতুকে মিজোরামের ভেঙে পড়া ব্রিজের ভিডিয়ো বলে ছড়ানো হল ফেসবুকে

এই ভাইরাল ভিডিয়োটি শেয়ার করে এটি মিজোরামের সেই ব্রিজ বলে দাবি করা হচ্ছে যেটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছিল। ভিডিয়োটির উপর লেখা রয়েছে, "মিজোরামের ব্রীজ।"

Advertisement
মুর্শিদাবাদের নির্মীয়মান রেল সেতুকে মিজোরামের ভেঙে পড়া ব্রিজের ভিডিয়ো বলে ছড়ানো হল ফেসবুকে মুর্শিদাবাদের নির্মীয়মান রেল সেতুকে মিজোরামের ভেঙে পড়া ব্রিজের ভিডিয়ো বলে ছড়ানো হল ফেসবুকে

চলতি অগাস্ট মাসে মিজোরামের একটি নির্মীয়মান সেতু দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অনেকে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মৃতদের মধ্যে ২৫ জনই এই রাজ্যের বাসিন্দা ছিলেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগ মালদা জেলার। এই ঘটনার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো বেশ ভাইরাল হয়েছে।

এই ভাইরাল ভিডিয়োটি শেয়ার করে এটি মিজোরামের সেই ব্রিজ বলে দাবি করা হচ্ছে যেটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছিল। ভিডিয়োটির উপর লেখা রয়েছে, "মিজোরামের ব্রীজ।" সেই সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "মিজোরাম ব্রিজে কাজ করা সেই মানুষগুলো, যারা আজকে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।"

অর্থাৎ বলতে চাওয়া হয়েছে, এটাই হল মিজোরামের সেই ব্রিজ যেটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে বাংলার শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে।

ভাইরাল ভিডিয়োটির আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে, যে ব্রিজে কাজ হতে এই ভিডিয়োটি দেখা যাচ্ছে তা মিজোরামের নয়, বরং মুর্শিদাবাদের।

কীভাবে জানা গেল সত্যি?

ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এখানে ব্রিজের নীচে নদী ও সেখানে জল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু, মিজোরামে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ব্রিজের নীচে কোনও জল নেই। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এই দুর্ঘটনার ছবি থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। এই বিষয়টির কারণেই মূলত ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটির সত্যতা ঘিরে প্রশ্ন উঠে যায়।

এই ভিডিয়োটি ঠিক কোথাকার, সেই বিষয়ে সূত্র পেতে আমরা সবার প্রথম এর স্ক্রিনশটগুলিকে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা করি। কিন্তু কোনও ফলাফল না মেলায় এরপর আমরা ভিডিয়োটির কমেন্ট সেকশনে লক্ষ্য করে দেখি, অনেকেই লিখেছেন যে এটি মিজোরাম নয়, বরং আহিরন ব্রিজের ভিডিয়ো।

Advertisement

কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জানা যায়, আহিরন সেতু মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর সবডিভিশনের সুতি গ্রামের কাছে তৈরি হয়েছে। এরপর আমরা গুগল ম্যাপে এই এলাকাটি খোঁজার চেষ্টা করি। যেহেতু, ভাইরাল ভিডিয়োটিতে এক জায়গায় দূরে আরেকটি সেতু দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, তাই অনুমান নেওয়া যায় যেখানেই এই ব্রিজটি থাকুক না কেন, তার অদূরে আরেকটি সেতু থাকবে।

গুগল ম্যাপে সার্চ করে আমরা দেখতে পাই, ভাগীরথি নদীতে সংযোগকারী ফারাক্কা ক্যানালের উপর একটি মূল আহিরন সেতু রয়েছে, ও তার অদূরে দ্বিতীয় আহিরন সেতুটি নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা রয়েছে। যদিও গুগল ম্যাপের স্যাটেলাইট ভিউতে দ্বিতীয় সেতুর কোনও কাঠামো দেখা যাচ্ছিল না। তবে, গুগল ম্যাপে ওই দ্বিতীয় সেতুর উপর ট্যাপ করলেই সেই ব্রিজের নির্মীয়মান অতি সাম্প্রতিক ছবি দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, গুগল ম্যাপের ভিউটি এ ক্ষেত্রে আপডেটেড নয়। 

গুগল ম্যাপের ফটোতে থাকা দ্বিতীয় আহিরন সেতুর ছবিগুলিতে যে ব্রিজটি দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে যখন ভাইরাল ভিডিয়োতে থাকা সেতুর গঠনগত কাঠামো তুলনা করা হয়, তখন পরিষ্কার হয়ে যায় যে উভয় ব্রিজ একই।

এই বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত তথ্য পেতে আমরা জঙ্গিপুর রোড স্টেশনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। স্টেশন মাস্টার শ্যামসুন্দর ভাদুড়ি আমাদের নিশ্চিত করেন যে ভিডিয়োটি দ্বিতীয় আহিরন সেতুর যা ট্রেন চলাচলের জন্য ডবল লাইন হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রথম লাইটি মূল সেতুর সঙ্গেই রয়েছে। জঙ্গিপুর রোড স্টেশনের ফেসবুক পেজ থেকেও গত মাসে এই দ্বিতীয় সেতুর অগ্রগতির খবর-সহ ছবি শেয়ার করা হয়েছিল।    

এ বাদেও আমরা কথা বলি স্থানীয় বাসিন্দা তথা আহিরন হেমাঙ্গিনী বিদ্যায়তন হাইস্কুলের শিক্ষক রজত দাসের সঙ্গে। তিনি জানান, "এটি আহিরন ব্রিজের ভিডিয়ো। বর্তমানে এটি নির্মীয়মান অবস্থায় রয়েছে। মূল আহিরন ব্রিজ থেকে এটি প্রায় ২০০ মিটার দূরে তৈরি হচ্ছে, রেলের ডবল লাইনের জন্য।"

অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, কীভাবে মুর্শিদাবাদের একটি সেতুকে মিজোরামের দুর্ঘটনার সঙ্গে জুড়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

 

ফ্যাক্ট চেক

Facebook user

দাবি

ভিডিয়োতে মিজোরামের সেই ব্রিজ দেখা যাচ্ছে যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে বাংলার ২৫ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

ফলাফল

ভিডিয়োটি মিজোরামের নয়। বরং মুর্শিদাবাদের আহিরন রেল ব্রিজের।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook user
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement