তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী ছিলেন গোপাল ভাঁড়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার সদস্য ছিলেন। তাঁর রোজের কথোপকথন নিয়েই তৈরি হয়েছে নানা বই, মজার কৌতুক। আজ সেখান থেকেই রইল কিছু মজার জোকস-
> গোপাল ভাঁড়ের দোতলা বাড়ি তৈরি হলে সে তার প্রতিবেশী এক ভাতিজাকে ছাদের উপর দাঁড়িয়ে ডাকতে লাগলো, ‘রাখাল, ও রাখাল, কী করছিস ওখানে?’ রাখাল বুঝলো, কাকা তাকে দোতলা বাড়ি দেখাচ্ছে। তাই সে কোনো কথা বলল না।
এর বহুদিন পর রাখালও নিজের চেষ্টায় ছোটখাট একটা দোতলা বাড়ি তৈরি করল। তারপর ছাদে উঠে ডাকতে লাগল, ‘কাকা কাকা, সে বছর আমায় ডেকেছিলে কেন?’
> গোপাল ভাঁড়কে এক লোক বলল–
লোক: গোপাল, তোমার জন্য একটা সুসংবাদ আছে।
গোপাল: কী সুসংবাদ?
লোক: তোমার পাশের বাড়িতে দেখলাম বিরাট খানাপিনার আয়োজন করা হয়েছে।
গোপাল: তাতে আমার কী?
লোক: না দেখলাম, সেই বাড়ি থেকে খানাপিনা নিয়ে তোমার বাড়িতেও গেল।
গোপাল: তাতে তোমার কী?
> ছোটবেলায় গোপাল ভাঁড় কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে বুড়োরা তাকে ক্ষেপাত আর হাসত, ‘গোপাল, এরপর তোমার পালা।’
এ কথা শুনে গোপালের খুব রাগ হতো। বুড়োদের কিভাবে জব্দ করা যায়, সেই পথ খুঁজতে লাগল এবং একসময় পেয়ে গেল। শবদাহ আর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে গিয়ে ওইসব বুড়োদের বলতে লাগল, ‘এরপর তোমার পালা!’
> গোপাল একবার গ্রামের মোড়ল হয়েছিল। তো একদিন ভোরবেলায় এক লোক এসে ডাকতে লাগলো, ‘গোপাল? গোপাল?’ গোপাল ভাঁড় কোনো উত্তর না দিয়ে শুয়েই রইলো। এবার লোকটা চিৎকার করে ডাকতে লাগলো, ‘মোড়ল সাহেব, মোড়ল সাহেব।’ এবারও গোপাল কোনো কথা না বলে মটকা মেরে শুয়ে রইলো।
গোপালের বউ ছুটে এসে বললো, ‘কী ব্যাপার, লোকটা মোড়ল সাহেব মোড়ল সাহেব বলে চেঁচিয়ে পড়া মাত করছে, তুমি কিছুই বলছ না!’ গোপাল কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বললো, ‘আহা, ডাকুক না কিছুক্ষণ, পাড়ার লোকজন জানুক আমি মোড়ল হয়েছি।’
> একবার রাজা মশাই শক্ত করে গোপাল ভাঁড়ের হাত আঁকড়ে ধরে বললেন, কী গোপাল, বুদ্ধির জোরে কি আর সব হয়? মাঝে গায়ের জোরও লাগে। পারলে হাতখানা ছোটাও দেখি বাপু। দেখি, কেমন তোমার শক্তি!রাজা ভেবেছিলেন, গোপাল ভাঁড় হয়তো হাত ধরে টানাহেঁচড়া করবে, মোচড়ামুচড়ি করবে। রাজাকে অবাক করে দিয়ে সে এসবের কিছুই করল না! শুধু বিড়বিড় করে রাম রাম বলতে লাগল।
রাজা মশাই: কী হলো, অত রাম রাম করছ কেন?
গোপাল বলল, রাজা মশাই, গুরুজনের মুখে শুনেছি, রামনাম জপলে ভূত ছাড়ে!
রাজা সঙ্গে সঙ্গে গোপালের হাত ছেড়ে দিলেন!