চেতলা অগ্রণীর এবছরের পুজোর থিম 'অমৃতকুম্ভের সন্ধানে'। এই মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে ২৬ লক্ষ রুদ্রাক্ষ। যা নিয়ে আসা হয়েছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, নেপাল, বারাণসী এবং উত্তরকাশী থেকে। বাংলার ৫ জেলার ২০০ শিল্পী এই বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষে ওই বিপুল পরিমাণ রুদ্রাক্ষ দিয়ে অভিনব মণ্ডপ তৈরি করেছেন।
এবার অন্যতম আকর্ষণীয় হতে চলেছে অর্জুনপুর আমরা সবাই ক্লাবের পুজো। তাদের থিম 'মুখোমুখি'। কাচের শিট এবং স্টিলের ইনস্টলেশনে সাজিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপ। যা না দেখলেই মিস।
বরাবরই ইউনিক থিম গড়ে চমক দেয় জগৎ মুখার্জি পার্ক। তাদের এবারের ভাবনা 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?' ৮৯ বছরে এই পুজো কমিটি তাদের শিল্পকর্ম আর সাজসজ্জার মাধ্যমে তুলে ধরবে কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) আমাদের জীবনকে বদলে দিচ্ছে। তাদের বার্তাটি হল: 'অন্ধকার থেকে যে আলো জাগে, তা যেন অজ্ঞতাকে দূর করে। আমরা যেন প্রযুক্তির ভালোটা গ্রহণ করি, আর ক্ষতিকর দিকটা বর্জন করি।'
কাশী বোস লেন কাশী বোস লেনের পুজো প্রতি বছরই নিত্যনতুন চমক নিয়ে হাজির হয়। তাদের থিমের ভাবনা এবং মণ্ডপের সাজসজ্জা বরাবরই খুব আকর্ষণীয়।
ঠিক ১০ বছর আগে সবচেয়ে বড় দুর্গা গড়ে চমক দিয়েছিল দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গোৎসব কমিটি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের চাপে বিপদ ঘটার আশঙ্কায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সেবারের পুজো। ফের ১০ বছর পর ভিন্ন স্বাদের ভাবনা নিয়ে হাজির তারা। এবার বৃষ্টির জলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে তৈরি হচ্ছে সুবিশাল মণ্ডপ। জলের উপর বিরাট আকারের একটি নৌকা তৈরি করছে দেশপ্রিয় পার্ক। মণ্ডপের উচ্চতা তাদের ৮৮ তম বছরের সঙ্গে মানানসই ৮৮ ফুটের।
ত্রিধারা সম্মীলনীর এবারের থিম ভাবনা 'চলো ফিরি'। এই থিমকে বাস্তব রূপ দিয়েছেন শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা। জানানো হয়েছে, এটি শিল্প, ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মেলবন্ধন হতে চলেছে এবারের থিম।
'আত্মশুদ্ধি' অর্থাৎ আত্মার শুদ্ধিকরণ। গত ১ বছরে বাংলা তার মেয়েদের সন্মানহানি হতে দেখেছে। পরপর নারকীয় ঘটনা মনে করিয়ে দেয় স্বর্গে দেবী দুর্গার হাতে অসুর বধ হলেও, মর্ত্যে এখনও বহু অসুর খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই মর্মেই এবার মুদিয়ালি ক্লাবের থিম একটু অন্যরকম। আলোর রোশনায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ঘূর্ণীয়মান অগ্নি। এই থিমের মাধ্যমে অন্তরের অসুরকে দমন করে আত্মশুদ্ধি হওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বেহালা চত্বরে ঠাকুর দেখতে এলে যেন বড়িশা ক্লাবে ঢুঁ মারা মাস্ট। প্রতি বছরই মানুষের নজর থাকে এই ক্লাবের থিমে। বড়িশা ক্লাবের এই বছরের থিম ‘শূন্য পৃথিবী’। তবে তা জোকারদের। এক এক করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সার্কাসের তাঁবু। সার্কাসের সঙ্গে জড়িত থাকা বাকি মানুষেরা জীবনের মূল স্রোতে নিজেদের মানিয়ে নিলেও, জোকারদের জন্য সেটা সহজ নয়। সেখান থেকেই এই ভাবনা'
পুজোয় আবারও চমক নিয়ে হাজির শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব। কখনও সেখানে দেবীমূর্তি অবস্থান করে পৃথিবীর সুউচ্চ ইমারত ‘বুর্জ খলিফা’য়, কখনও ভ্যাটিকান সিটির ব্যাসিলিকায়, কখনও আবার ডিজনিল্যান্ডে। ২০২৫-এও তাদের পুজোয় রয়েছে বড়সড় চমক। এবছর শ্রীভূমির থিম নিউ জার্সির স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম মন্দির। নিউ জার্সির বিশাল এলাকা জুড়ে শ্বেতপাথরে তৈরি এই মন্দির খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আর তাই এবছর সেই মন্দিরকেই থিম হিসেবে বেছে নিয়েছেন শ্রীভূমির কর্তারা।
রাজডাঙা নব উদয় সংঘ এবার প্রথম থেকেই নজর কাড়ছে। তাদের থিম 'প্রশ্ন'। সমাজের কাছে তারা তুলে ধরেছে সেই প্রশ্ন, তা-ও ইউনিক মণ্ডপসজ্জার মাধ্যমে। প্যান্ডেলের মধ্যে রয়েছে সুবিশাল কড়াই যা মানুষের দোলাচলকে বোঝাবে। ৪১ তম বর্ষে এই মণ্ডপের উদ্যোক্তারা মানুষের কাছে শব্দ আকারে একটি প্রশ্ন তুলে ধরতে চাইছেন, যা কোনও বর্ণ-ধর্মের ভেদাভেদ করে না। মানুষকে কেবলই মানুষ বলে মনে করে।