দুর্গাপুজোর মুখে টোটো চালকদের দৌরাত্ম্য রুখতে এবার কঠোর নীতি কার্যকর করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এবার থেকে আর নির্দিষ্ট রুট ছাড়া অন্যত্র টোটো চালানো যাবে না। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে এই ৩ চাকার যান চালানোয় লাগাম টানতে এবার বিশেষ উদ্যোগ মমতা সরকারের। এই মর্মে পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে ১১ পাতার একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে।
এবার থেকে টোটো চালানোর জন্য জেলা স্তরে রেজিস্ট্রেশন হবে বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক গাড়িতে লাগাতে হবে নির্দিষ্ট নম্বর প্লেট এবং তাতে থাকবে কিউ আর কোড। একটি রুটের টোটো অন্যত্র ঢুকলেই ওই কিউ আর কোড স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ে যাবে। এমনটা হলে কিংবা একজন ব্যক্তির নামে একাধিক টোটোর রেজিস্ট্রেশন থাকলে বাতিল বাতিল হতে পারে সে রেজিস্ট্রেশন।
এদিকে, এতদিন পর্যন্ত টোটো থেকে সরকারি কোষাগারে কোনও রাজস্ব আসত না। কিন্তু নয়া নিয়মাবলী কার্যকর হলে এই ৩ চাকার যানের জন্য বার্ষিক করও নেওয়া হবে। ফলে রাজস্ব আদায় হবে সরকারের।
পরিবহণ দফতর আগেই জানিয়েছিল, বর্তমানে রাস্তায় যত টোটো চলে তার অধিকাংশই বেআইনি। এই টোটোগুলি বদলে ফেলে তাদের ই-রিকশা চালানোর জন্য সময় দেবে সরকার। প্রতিটি পুরসভা ও পঞ্চায়েত ইউনিয়নের সঙ্গে এই মর্মে আলোচনা করবে পরিবহণ দফতর। নির্দিষ্ট রুট নির্ধারিত করা দেওয়া হবে ই-রিকশাগুলিকে। যে রুটে টোটোর সংখ্যা বেশি সেখানে রোটেশন পদ্ধতিতে চলবে।
জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় টোটো, অটো, ই-রিকশা চালানোর কোনও অনুমতি নেই। তা সত্ত্বেও দেখা যায় বেআইনি অটো-টোটো চলাচল করছে। যার ফলে বাড়ছে যানজট। দুর্ঘটনার কবলেও পড়ছেন একাধিক মানুষ। ফলে আবারও কঠোর নীতির পাশাপাশি জাতীয় ও রাজ্য সড়কে টোটো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা স্মরণ করানো হয়েছে।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসন, পুরসভা এবং টোটো সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল পরিবহণ দফতর। যাত্রী সুরক্ষা, যানজট কমানো এবং রুট নির্ধারণ এবং বেপরোয়া টোটো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় সেই বৈঠকে। সরকার আশা করছে, নয়া নীতি কার্যকর হলে টোটোর দৌরাত্ম কমবে।
হাতে টানা রিকশা আজকাল প্রায় দেখা যা না বললেই চলে। শহরের আনাচে কানাচে এখন নতুন আমদানি, ই-রিকশা। যদিও বহুদিন ধরেই গ্রামে-গঞ্জে এবং শহরতলী এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় এই যান। অল্প দূরত্ব যাওয়ার জন্য বহু মানুষই আজকাল ই-রিকশায় চাপেন। মাত্র ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে চটজলদি গন্তব্যে পৌঁছতে এর জুড়ি মেলা ভার। তেমনই এর দৌরাত্ম নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। শহরে যেমন বাড়ছি ই-রিকশার সংখ্যা, তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাদের 'দাদাগিরি'। প্রচুর সংখ্যক ই-রিকশা যানজট তৈরি করছে, যা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যযাত্রীদের জন্য।
ই-রিকশা চালানোর জন্য আলাদা করে রাজ্য সরকারের থেকে পারমিটের প্রয়োজন পড়ে না। ফলে ই-রিকশা কিনে চালানো সহজতর। যানজটের সৃষ্টি হলেও সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে ই-রিকশা চালকদের পাকড়াও করাও ততটা সহজ নয়। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী বলেছিলেন, 'লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক ই-রিকশা কিনেছে এবং যেহেতু পারমিট নিতে হয় না তাই যত্রতত্র চালাচ্ছে। কিন্তু ধরপাকড় করে বন্ধ করার অধিকার নেই।'
পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, 'আমরা এদের একটি নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে আনতে চলেছি। কোন এলাকায়, কোন রাস্তায়, কোন পর্যন্ত গেলে যানজট তৈরি হবে না, তা পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা বসে আলোচনা করে নির্ধারিত করবে। ফলে মানুষ অনেকটা স্বস্তি পাবে।'
মোটামুটিভাবে এই টোটো বা ই-রিকশার দাম শুরু হয় ১ লাখ টাকা থেকে। মানুষের বসার সুবিধেও আছে এই অত্যাধুনিক যানগুলি। একবার সম্পূর্ণ চার্জ দিলে ৮০ কিমি পর্যন্ত যাওয়া যায় ই-রিকশায়। সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২৪.৫ কিমি এবং এতে সম্পূর্ণ চার্জ হতে ২.৩০ ঘণ্টা সময় লাগে যার খরচ পরে ৬ পয়সা প্রতি কিমি।