২০১১ সালে রাজ্যে প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৈরি হয়েছিল এক নয়া ইতিহাস। সেবার বাংলা জয়ের পর ব্রিগেডে ঐতিহাসিক ২১ জুলাই দেখেছিল বঙ্গবাসী। তারপর ১০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে করোনা কালে দলের এই ঐতিহাসিক জয় আগামী ২১ জুলাই ভার্চুয়ালি সেলিব্রেট করবেন মমতা। বিধানসভা জয়ের পর ব্রিগেডে ২১ জুলাই বিজয় দিবস পালন করার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত দু'মাসে পরিস্থিতি পাল্টেছে। করোনা রুখতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয়েছে রাজ্যে। তাই কর্মসূচি পাল্টেছে বাংলায় ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও। গতবারের মত এবারও শহিদ দিবসে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখতে দেখা যাবে তৃণমূলনেত্রীকে। অনুষ্ঠান যতই ভার্চুয়ালি হোক না কেন আয়োজন ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। শোনা যাচ্ছে এবারও একুশে জুলাই তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন অন্য দলের বেশ কয়েকজন নেতৃত্ব।
প্রতিবারই একুশে জুলাই চমক দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অতীতে একাধিকবার দেখা গিয়েছে এদিন ভিন দলের নেতা-নেত্রীদের তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিতে। টলিউড ইন্ডাস্ট্রির গোটাটাকেই প্রায় একুশের মঞ্চে হাজির করে দেন মমতা। করোনা আবহে মঞ্চে এবার আর দেখা যাবে না চমক। তবে শোনা যাচ্ছে এবারও সর্বভারতীয় স্তরের বেশ কয়েকজন নেতৃত্ব তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন। সম্প্রতী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য অন্য রাজ্যে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নেওয়া। সূত্রের খবর, তার এই মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিহারীবাবু শত্রুঘ্ন সিনহা তৃণমূলের পতাকা হাতে নিতে পারেন। ভোটের আগে তৃণমূলে যোগ দিতে দেখা গিয়েছিল বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহাকে। বিজেপির টিকিটে সাংসদ হয়েছিলেন শত্রুঘ্নও। তবে বর্তমানে কট্টর বিজেপি বিরোধী হিসাবেই তিনি পরিচিত। ফলে তাঁকে ভিন রাজ্যের সংগঠনের কাজে লাগাতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস।
তবে প্রশ্ন ভিনরাজ্যের নেতা-নেত্রীরা নন, এরাজ্যের দলবদলুদের নিয়ে কি এবার অবস্থান বদলাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ভোটের মুখে দলের অনেকেই মুখ ফিরিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে। তৃণমূল থেকে বেরিয়েই প্রাক্তন নেত্রীকে অভিযোগে বিদ্ধ করতে ছাড়েননি কেউই। তবে একুশের জয়ের পর দলত্যাগীদের প্রতি এতটুকুও ক্ষোভ না দেখিয়ে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল “কেউ ফিরতে চাইলে স্বাগত।” এরপরেই সপুত্র মুকুল রায়কে ফিরতে দেখা গেছে তৃণমূলে। তারপর থেকেই দলবদলু অনেকেই আশায় দিন গুনছেন তৃণমূলনেত্রীর ফিরে আসার ডাকের।
গতবার ২১ জুলাইয়ে মমতার বার্তা
২০২০ সালেও করোনা আবহে ভার্চুয়ালি ভাসন দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেবার সামনে ছিল একুশের ভোট। তৃণমূলনেত্রী বার্তা দিয়েছিলেন, ভুল করে বিজেপিতে গেলে চলে আসুন। মমতা বলেছিলেন, ‘বিজেপিতে যারা ভুল করে চলে গিয়েছেন তারা তৃণমূলে ফিরে আসুন। সিপিএমে যারা রয়েছেন তারাও আসুন। কংগ্রেসে থেকে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার থেকে তৃণমূলে আসুন। এই দলে শোষণ করার কেউ নেই। শাসনের লোক আছে। একমাত্র তৃণমূলই পারে সোনার বাংলা গড়তে।’ সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দিয়েছিলেন মমতা।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করেছেন কেবল দলবদলুরাই নয় তৃণমূলে যোগ দিতে চাইছেন একাধিক বিজেপি বিধায়ক। নির্বাচনের পর থেকেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন এমন জল্পনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন তৃণমূলের নেতৃত্বের বাড়িতে রাজীবের হাজির হওয়া সেই জল্পনাকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। সব্যসাচী দত্তকেও মমতার গুনগান গাইতে দেখা গেছে। সোনালি গুহ, দীপেন্দু বিশ্বাস, সরলা মুর্মু, অমল আচার্যরা তো সরাসরি তৃণমূলে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে নেত্রী এখনও গ্রিন সিগন্যাল দেননি বলেই আটকে রয়েছে তাঁদের ঘর ওয়াপসি। মুকুল রায়ের তৃণমূলে ফেরার দিনই গদ্দারদের দলে ফেরানো হবে না, বার্তা দিয়েছিলেন মমতা। ওয়াকিবহাল মহলের মতে শুভেন্দু অধিকারীকেই এমন বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। মান-অভিমান ভুলে এবার ২১ জুলাই মমতা পুরনো সৈনিকদের কাছে টেনে নেন কিনা তা জানতে আর এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।