ট্রেন আসার কথা ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে, কিন্তু ঘোষণা হল সেই ট্রেন ঢুকবে ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে! তারপরই দেখা গেল হু হু করে সেই ট্রেনটি ঢুকে যাচ্ছে। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে হুড়োহুড়ি শুরু। অনেকেই ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাসের ধার না ধারেন না। সটান বিপজ্জনকভাবে রেললাইনে নেমে অন্য প্ল্যাটফর্মে চলে যান। কাজেই, অহরহ দুর্ঘটনা ঘটে। হাওড়া ও শিয়ালদা এসআরপি-র আওতাধীন স্টেশনগুলিতে ট্রেন লাইনের অবাধ পারাপারের কারণে বছরে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। রেলপুলিশ (জিআরপি) ও যাত্রীরা মনে করছেন, লাইনের দু’ধারে ফেন্সিং না থাকা ও নজরদারির অভাবই এই দুর্ঘটনার মূল কারণ।
বিভিন্ন স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম বদল বা নিরাপদ পারাপারের জন্য ফুটওভারব্রিজ ও সাবওয়ে থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রেই এগুলি প্ল্যাটফর্মের এক প্রান্তে সীমাবদ্ধ। ফলে যাত্রীরা দ্রুত অন্য প্রান্তে পৌঁছানোর জন্য ট্রেনলাইন পার হতে বাধ্য হন। এছাড়া, স্টেশন এলাকার ২০-২৫ ফুট দূরে গজানো ঝুপড়ি থেকেও মানুষের লাইনে চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রেলপুলিশের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিপজ্জনক স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে দমদম, বিধাননগর, নৈহাটি, বারাকপুর, বারাসত, টিকিয়াপাড়া, শেওড়াফুলি, বর্ধমান এবং ব্যান্ডেল। এসব স্টেশনে মাসে গড়ে ১২-১৫ জন ট্রেনে কাটা পড়ছেন। জিআরপি দাবি করেছে, দুর্ঘটনাপ্রবণ ৫০০-এরও বেশি স্থান চিহ্নিত হয়েছে এবং ফেন্সিং দেওয়ার জন্য রেলকে ফের প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে।
নিত্যযাত্রীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সোদপুর স্টেশনের এক যাত্রী জানালেন, পুলিসের কড়াকড়ি না থাকলে এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা না তৈরি হলে দুর্ঘটনা আটকানো অসম্ভব। ওভারব্রিজ অনেকটা খাড়া হওয়ায় অনেকেই ব্যবহার করেন না, তাই লাইনে পার হওয়াই সহজ মনে করেন। প্ল্যাটফর্ম বদলের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা থাকা উচিত।
রেলপুলিশ এবং আরপিএফ দু’পক্ষই ফেন্সিংয়ের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন। তবে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে প্ল্যাটফর্মের কার্যকর ব্যবস্থা ও নাগরিক সচেতনতা তৈরি করাও জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।