বইমেলার আয়োজন নিয়ে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন পাবলিশার্স অ্যান্ড গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়। জানিয়েছেন এবারের বইমেলার থিম কান্ট্রি জার্মানি। ৪৮ বছরের মেলার ইতিহাসে প্রথমবার। প্রতিবছরের মতো অংশগ্রহণ করছে গ্রেট ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পেরু, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া এবং লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশ। কিন্তু এই তালিকায় নাম নেই বাংলাদেশের। যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে পাবলিশার্স অ্যান্ড গিল্ডের সভাপতি বলেন, “উদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে আমরা সরকারের মুখাপেক্ষী। তারা যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই মেনে পদক্ষেপ করা হবে।” সুতরাং ২০২৫ সালে কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে কিনা, সেই বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত।
সূত্র বলছে, গত বছরেও কলকাতা বইমেলায় বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল বাংলাদেশের স্টলের। হয়েছে উপার্জনও। তবে চলতি বছরে বাংলাদেশের উপস্থিতি নিয়ে সংশয় রয়েছে। দেখা গিয়েছে, প্রতিবার বাংলাদেশের পাবলিশার্সরা কলকাতা বইমেলায় প্যাভিলিয়ন করার জন্য আবেদন করে থাকেন। তার পর কেন্দ্রীয় অনুমতি সাপেক্ষে সেই ছাড়পত্র দেয় বইমেলা কর্তৃপক্ষ। তবে শেখ হাসিনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। সেই প্রেক্ষাপটে কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
বাঙালির শহর কলকাতার বইমেলায় কি সত্যিই দেখা মিলবে না বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ানের? গিল্ডের সভাপতির বক্তব্য, ‘তিন মাস ধরে প্রতিবেশী ( বাংলাদেশ) দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায়, গুরুতর জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে চিকিৎসা ভিসা ছাড়া অন্য কোনো ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে গিল্ড নিজ থেকে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। নীতিগত সিদ্ধান্তের জন্য বিদেশ মন্ত্রণালয় এবং আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য আমাদের রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে।’ এদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় অংশগ্রহণের বিষয়টি তদারকি করে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। এ ব্যাপারে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম বলছেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হয়েছে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সঙ্গে। কলকাতার আন্তর্জাতিক বইমেলায় অংশ নিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়নি। সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে কথা বলেছি।’
কলকাতা বইমেলায় গত বছর ৩ হাজার ফুটের বেশি জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। সেখানে অংশ নেয় ৪৫টি বাংলাদেশি প্রকাশনা সংস্থা। এ ছাড়া বিগত বছরগুলোর মতো গত বছরও ৪৭তম বইমেলা প্রাঙ্গণে পালন হয়েছিল বাংলাদেশ দিবস। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় ১৯৯৯ সালে থিম কান্ট্রি হয়েছিল বাংলাদেশ।জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট বইমেলার আয়োজন থেকে উৎসাহী হয়ে ১৯৭৬ সাল থেকে কলকাতায় শুরু হয় এই বইমেলার আয়োজন। ১৯৯৬ সাল থেকে গত ২৮ বছর ধরে কলকাতার প্রতিটি বইমেলায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। আর ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ওই বইমেলায় যোগ দিয়েছিলেন। সে বছর বাংলাদেশ ছিল কলকাতার ওই বইমেলার থিম কান্ট্রি। তবে, ২৮ বছর পর সম্ভবত এই প্রথমবারের মতো কলকাতা বইমেলা থেকে বাদ পড়ল বাংলাদেশের নাম। এই সিদ্ধান্তে বইপ্রেমীদের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
কলকাতা বইমেলা বরাবরই দুই বাংলার সাহিত্যিক, প্রকাশক এবং পাঠকদের মিলনমেলা হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের প্রকাশকরা এই মেলায় বই বিক্রি এবং নিজেদের সাহিত্য তুলে ধরার পাশাপাশি দুই বাংলার মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন রচনা করেছেন। বিশেষজ্ঞমহলের মতে, এবার প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তন ও তীব্র ভারত বিরোধিতার কারণেই খুব সম্ভবত বইমেলায় বাংলাদেশের প্রবেশ লাল ফিতের ফাঁসে আটকে গেল। বাংলাদেশি প্রকাশকরা স্বাভাবিকভাবেই এই সিদ্ধান্তে হতাশ। কলকাতা বইমেলায় অংশগ্রহণ তাদের ব্যবসা এবং সাহিত্য প্রচারের জন্য একটি বড় সুযোগ ছিল। কলকাতার অনেক পাঠকও হতাশা প্রকাশ করেছেন। প্রসঙ্গত, ঢাকায় একুশে বইমেলায় ভারতের প্রকাশনা রাখা হয় না।