
দক্ষিণ কলকাতার ল কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা রাজ্যে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে এই ঘনার মূল অভিযুক্ত তথা টিএমসিপির প্রাক্তন দাপুটে নেতা মনোজিৎ মিশ্র-সহ তিনজনকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোজিতের পরিধেয় জামাকাপড়ও বাজেয়াপ্ত করে পাঠানো হয়েছে ফরেনসিকে। অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের বাড়ি থেকে তাঁর ঘটনাস্থলে পরা জামা-প্যান্ট, অন্তর্বাস ও জুতো বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত পোশাকগুলি ইতিমধ্যেই ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সূত্রের খবর, ওই জামাকাপড়ে রক্ত, দাগ বা অন্য কোনও প্রাসঙ্গিক নমুনা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। পুলিশ মনে করছে, এই পোশাকগুলি থেকেই মিলতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ক্লু।
এদিকে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে গণধর্ষণে অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের একটি পুরনো ফেসবুক পোস্ট এই ঘটনার পর ভাইরাল হয়েছে। এই মনোজিৎ মিশ্রই আরজি কর কাণ্ডের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিল, 'ধর্ষকের ফাঁসি চাই, দোষীদের ফাঁসি চাই, নাটক নয়, বিচার চাই।' সেই মনোজিতের বিরুদ্ধেই কসবার আইন কলেজের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
প্রসঙ্গত, সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে গণধর্ষণে অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের সঙ্গে একাধিক তৃণমূল নেতার ছবি সামনে এসেছে। মন্ত্রী থেকে তৃণমূল বিধায়ক, ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সভাপতি, কে নেই সেই তালিকায়। ধৃতের ফেসবুক প্রোফাইলে ইন্ট্রো হিসেবে লেখা রয়েছে- 'ল কলেজের TMCP ইউনিটের প্রাক্তন সভাপতি'। কলেজের পরিচালন সমিতির সুপারিশে, এই কলেজেই অস্থায়ী কর্মী হিসেবে চাকরি পেয়ে যায় মনোজিৎ মিশ্র। সূত্রের খবর, সাউথ ক্যালকাটা ল'কলেজে অস্থায়ী কর্মীর পাশাপাশি আলিপুর কোর্টেও আইনজীবী হিসেবে প্র্যাক্টিস করত গণধর্ষণে অভিযুক্ত প্রাক্তন TMCP নেতা ও বর্তমান তৃণমূল কর্মী মনোজিৎ মিশ্র। অর্থাৎ এই কলেজের অস্থায়ী স্টাফও ছিল মনোজিৎ।
কলেজ সূত্রে খবর, ২০১৪ সালে মনোজিৎ ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে ঢোকে। কিন্তু পাশ করতে না পারায় ডিসকলেজিয়েট হয়ে যায়। প্রথম থেকেই ক্যাম্পাসে টিএমসিপি–র সঙ্গে যুক্ত ছিল মনোজিৎ। ছিল ইউনিট প্রেসিডেন্টও। পরে ২০২১–এ দক্ষিণ কলকাতার সাংগঠনিক সম্পাদকও করা হয় তাঁকে। যদিও টিএমসিপি–র রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের দাবি, সংগঠনের কোনও পদে ছিল না মনোজিৎ। কলেজের অনেকেই বলছেন, ‘প্রভাব খাটিয়ে’ মনোজিৎ আবার ছাত্র হিসেবে ঢুকে পড়ে কলেজে। বছর তিনেক আগে শেষ পর্যন্ত পাশ করলেও কলেজ ছেড়ে যায়নি। তাকে নিয়ে বার বার অভিযোগ দায়ের হয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে। অভিযোগকারীরা মার খেয়েছেন, তবে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ। প্রাক্তন ছাত্রদের অভিযোগ, কেউ মনোজিতের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই ক্যাম্পাসের ভিতর ও বাইরে শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে হতো। এমনকি ছাত্রীরা অভিযোগ করলেও তাঁদের বাড়ি বা মেসে গুন্ডা পাঠিয়ে ভয় দেখানো হতো।