সময়টা বসন্ত হলেও শীত বিদায় নিতেই হঠাৎ করে গরম পড়ে গিয়েছে। আবহাওয়ার এই বদলে ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি-জ্বর। আর এর মাঝেই ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে শুরু করেছে অ্যাডেনোভাইরাস। অনেকেরই আশঙ্কা করোনার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এই ভাইরাসের প্রভাবে। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতা শহরে প্রাণ হারাল রাজ্যের তিন শিশু।
শনিবার রাতে বিসি রায় হাসপাতালে মৃত্যু হয় ন'মাসের একটি শিশুর । অন্যদিকে রবিবার সকালে মৃত্যু হয় আরও একটি দেড় বছরের শিশুর । তৃতীয় শিশুটির বয়সও এখনও এক বছর বয়স হয়নি, আট মাস। ন'মাসের শিশুটি হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর বাসিন্দা । পরিবার সূত্রে খবর, ২ ফেব্রুয়ারি থেকে জ্বর ছিল তার । তাকে সেই সময় বিসি রায় হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবার । সেখানে ভরতি করা হয় ৷সুস্থ হয়ে গেলে ১১ তারিখ তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় । কিন্তু হাসপাতাল থেকে ফেরার তিনদিনের মাথায় ফের জ্বর আসে ওই শিশুটির । তখন তাকে আবারও বিসি রায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল । তবে পরিবারের অভিযোগ, সেই সময় চিকিৎসক শিশুকে আইসিইউতে রাখার কথা বলে । কিন্তু তখন বিসি রায় কোনও আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই বলে হাসপাতাল পরিবারকে জানানো হয় । অবশেষে শনিবার রাতে মৃত্যু হয় ওই একরত্তির । ওই হাসপাতালেই রবিবার সকালে সিভিয়র নিউমোনিয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে আট মাসের শুভজিৎ মণ্ডলের ।
কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেও একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে । সে নদিয়ার বাসিন্দা । তবে সূত্রের খবর, তার মৃত্যু হয়েছে ব্রোঙ্কো নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে । ওই শিশুর জ্বরের পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা গিয়েছিল । এই শিশুটিকে কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ থেকে রেফার করা হয়েছিল কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যালে । সেখানে মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছিল তার । রবিবার ভোররাতে মৃত্যু হয় শিশুটির।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বেসরকারি সূত্রের খবর, গত দু’মাসে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে পনেরো জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে । যাদের মধ্যে অ্যাডিনোভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি বলে জানা যাচ্ছে । এই পরিস্থিতিতে সোমবার থেকেই শহরের একাধিক স্কুলে কার্যকর হচ্ছে মাস্ক-স্যানিটাইজার-দূরত্ববিধি। সাউথ পয়েন্ট, ভারতীয় বিদ্যাভবন, ক্যালকাটা গার্লসের মতো একাধিক স্কুল ফের মাস্ক বাধ্যতামূলক করছে। বহু স্কুল জানিয়েছে, নিজের বা বাড়ির কারও জ্বর-সর্দি-কাশি হলে স্কুলে যেতে হবে না। প্রয়োজনে পরে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে বা অন্য পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে পড়ুয়াদের রেজাল্ট তৈরি করা হবে।
জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে এমনিতে স্কুলে স্কুলে বহু পড়ুয়া অনুপস্থিত। উপস্থিতির হার আরও কমবে বলেই মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অ্যাডিনো-য় সবচেয়ে সাবধানে রাখা দরকার ৫ বছর পর্যন্ত শিশুদের। চিকিৎসকদের মতে, যে শিশুদের বয়স দু’বছরের কম, তাদের ক্ষেত্রে বিপদের সম্ভাবনা বেশি। বয়স এক বছরের কম হলে ঝুঁকি আরও বেশি। এই বয়সের শিশুদের ভীষণ সাবধানে রাখতে হবে। বড়দের কারও জ্বর-সর্দি-কাশি, গলাব্যথা হলে অবশ্যই বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ, বড়দের থেকেই এই সংক্রমণ শিশুদের মধ্যে ছড়ায়। শনিবার রাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত কলকাতায় জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে তিন শিশুর মৃত্যু এই চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।