দেখতে দেখতে ১৫০ বছর হয়ে গেল আলিপুর চিড়িয়াখানার। বলা হয় এটি দেশের সবচেয়ে পুরনো বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি চিড়িয়াখানা। সেই আলিপুর চিড়িয়াখানার আজ ১৫০ বছর পূর্তি। এই উপলক্ষ্যে চিড়িয়াখানায় সাজো সাজো রব। আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হয়েছে চিড়িয়াখানার অন্দরমহল। আজ বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
ভারতের প্রাচীনতম জুলজিক্যাল পার্ক আলিপুর চিড়িয়াখানা কত ইতিহাসের সাক্ষি। শহর কলকাতার বড় পর্যটক আকর্ষণ হল এই চিড়িয়াখানা। শীতের মরশুমে বিশেষ করে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে প্রচুর মানুষ ভিড় জমান। ১৫০ বছরের পুরনো এই চিড়িয়াখানা জন্মদিনে পাচ্ছে নতুন গেট। নতুন করে তৈরি করা হয়েছে দেশের অন্যতম সেরা চিড়িয়াখানার মূল ফটক। প্রায় দোতলা সমান উঁচু করা হচ্ছে এই নয়া গেট। উপরে থাকছে হাতির মাথার অবয়ব। সঙ্গে স্লাইডিং গেট।
আজ ১৫০ বছরে পা দিল আলিপুর চিড়িয়াখান। সেই উপলক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা নিয়ে সাজানো হচ্ছে চিড়িয়াখানার অন্দরমহল। চিড়িয়াখানার সার্ধ শর্তবর্ষ উপলক্ষ্যে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। । পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। স্থানীয় সাংসদ মালা রায়, পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত, সহ চেয়ারপার্সন ডঃ মারিয়া ফার্নান্ডেজ, সচিব মনোজ আগরওয়াল, প্রধান মুখ্য বনপাল নিরজ সিঙ্ঘল প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেন বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা সহ রাজ্য সরকারের অরণ্য দফতরের একাধিক কর্তাব্যক্তি। সূত্রের খবর, শুধু বহিরঙ্গের রূপটানই নয়, সেই সঙ্গে আগামী একবছর ধরে চিড়িয়াখানায় উন্নয়নমূলক একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে চলেছে কর্তৃপক্ষ।
আলিপুর চিড়িয়াখানার ১৫০ বছর পূর্তিতে নানাভাবে বিশেষ প্রতিষ্ঠা দিবসকে স্মরণ করা হচ্ছে। এই উপলক্ষে স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের সাহায্য নিয়েই বছরভর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে তা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হবে। একাধিক কর্মসূচি রয়েছে আজকের দিনে। রাই বাহাদুর রাম ব্রম্ভ সান্যালের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে। এছাড়াও বিশেষ স্মরণিকা প্রকাশ করবে কর্তৃপক্ষ। বন্যপ্রাণের আকর্ষণ বৃদ্ধিতে নতুন এনক্লোজার চালু ও একটি নতুন গেটের উদ্বোধন করা হবে। এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সূচনা হবে। আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রকৃতি তথ্য কেন্দ্রে আজ সারাদিনের অনুষ্ঠান।
চলতি বছর আলিপুর চিড়িয়াখানায় তিনটি বাঘ, সাদা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ সহ মোট ১১টি প্রজাতির জন্তু নিয়ে আসা হয়েছে। দর্শকদের কাছে চিড়িয়াখানার শোভা ও আকর্ষণ বাড়াতে আসছে আরও একাধিক নতুন পশুপাখিও। যদিও এখনই সে বিষয়ে চমকের ঝুলি খুলতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। তাঁরা বলছেন, অনেক আকর্ষণ বাকি রয়েছে। ধীরে ধীরে সব প্রকাশ পাবে। দেড়শো বছরে দর্শকদের কাছে নতুন রূপে চিড়িয়াখানাকে প্রকাশ করাই মূল লক্ষ্য।
বনদফতর সূত্রে খবর, গত মার্চ মাসে ‘ফেস্টিভ টাইম’ শেষ হওয়ার পর থেকেই চিড়িয়াখানার ভোল বদলের কাজে হাত দেয় কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ ছ’মাস ধরে সেই কাজ চলছে। মূলত সাপ ও পাখির এনক্লোজার নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের। একটি পুরনো সাপের ঘর রয়েছে, যেটা গোলাকৃতি গম্বুজের মতো দেখতে। সেই গোটা চত্বরটি নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এতে সাপেদের ঘরের পরিসর বাড়বে। একই সঙ্গে দর্শকদেরও সুবিধা হবে। বিশেষত, কচিকাঁচারা আরও সুষ্ঠুভাবে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। অন্যদিকে, অ্যানাকোন্ডার এনক্লোজারের উন্নতিতে নজর দেওয়া হচ্ছে।
আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাখির খাঁচার সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। দু’টি বাড়তি খাঁচা তৈরি করা হয়েছে। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, মঙ্গলবার থেকে বছর ভর বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলবে। দেশের মধ্যে প্রথম কোনও চিড়িয়াখানা সার্ধ শতবর্ষে পড়ল। চলতি বছরে তিনটি বাঘ, সাদা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ সহ মোট ১১ ধরনের জন্তু নিয়ে আসা হয়েছে এখানে। এতে দর্শকদের আকর্ষণ কয়েকগুণ বাড়বে। মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, পর্যটকদের জন্য আধুনিক ব্যবস্থাপনার আয়োজন করা হচ্ছে। পাশাপাশি, একরত্তি শিশুদের জন্যই বিশেষ ফিডিং রুম তৈরি করা হয়েছে।