‘বাংলা ভাষা বিলুপ্তপ্রায়। তাই আপনাকে আর দরকার নেই।’ শহরের নামী ইংরেজিমাধ্যম স্কুল কার্যত এই বয়ানেই ছাঁটাইয়ের চিঠি ধরাল বাংলার শিক্ষিকাকে। যা জানার পর নিন্দার ঝড় উঠেছে নাগরিক সমাজে। প্রশ্ন উঠেছে, খাস বঙ্গভূমেই কি বাংলাভাষা ব্রাত্য হয়ে পড়ল?
উত্তর ২৪ পরগনার (Uttar 24 Parganas) কামারহাটি পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের আড়িয়াদহ নওদাপাড়া হোলি চাইল্ড স্কুলের কর্তৃপক্ষের দেওয়া ওই চিঠির ছবি শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) ভাইরাল। তাতে দেখা যাচ্ছে, শুক্রবার ১৭ মার্চ তারিখ দেওয়া লেখা ইংরেজি চিঠিটিতে সংশ্লিষ্ট বাংলা শিক্ষিকাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট লিখেছে, ‘সম্মানীয় ম্যাডাম, আপনি জানেন আমাদের স্কুলে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে বাংলা অথবা হিন্দি পড়ানো হয়। প্রায় সব পড়ুয়া হিন্দিকেই বেছেছে। বাংলা ভাষা বিলুপ্তপ্রায়। সব ক্লাস মিলিয়ে মাত্র দু’-তিনজন বাংলা ভাষা নিলেও তারা ক্লাস করবে না। কারণ, তাদের বলা হয়েছে দ্বিতীয় ভাষা বাংলা নিলে ক্লাস কামাই করা চলবে না। কিংবা স্কুলের বদলে বাড়িতেই শিখতে হবে। আপাতত তারা বাড়িতেই বাংলা পঠনপাঠন চালাতে চায়।’
এবং এই কারণেই স্কুলে আর বাংলা শিক্ষকের দরকার নেই বলে জানিয়ে শিক্ষিকাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে স্কুল। কর্তৃপক্ষের তরফে চিঠিটি দিয়েছেন কে. বোস, যাঁর পরিচিতি দেওয়া হয়েছে ‘ইনচার্জ অফ ম্যানেজমেন্ট’ হিসাবে। তিনিই স্কুলটির পরিচালন কমিটির কর্তা। নাম কমলেশ বসু। রবিবার কমলেশবাবু আজতক বাংলাকে ফোনে বললেন, 'ভুলবশত ওই লেখা। অনিচ্ছাকৃত। আসলে স্কুলে বাংলার পড়ুয়া ক্রমশ কমছে। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলারও জনপ্রিয়তা কমছে। যেকারণেই বাংলার শিক্ষক কমানো হয়েছে। তবে আমাদের নোটিশের বয়ানে ভুল হয়েছে। সেজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা সংশোধন করে ফের ওই নোটিশ পাঠিয়েছি।'
দুঃখপ্রকাশ করে কমলেশবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মানুষের তো ভুল হতেই পারে। ভুলবশত ‘স্টুডেন্টস’ শব্দটা লেখা হয়নি। তাতে বাক্যটার অর্থ দাঁড়িয়েছে, বাংলা ভাষা প্রায় বিলুপ্ত। ত্রুটি নজরে আসতেই তা শুধরে নিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ব্যাপারটা একেবারেই অনিচ্ছাকৃত, আমি ক্ষমা চাইছি।’’
স্কুলের ঠিকানা, ৫এ, নওদাপাড়া রোড, কলকাতা-৭০০০৫৯। ঠিকানায় গেলে দেখা যাবে, বোর্ডে ‘হোলি চাইল্ড স্কুল’ ও তার পাশেই ‘শিশুতীর্থ স্কুল’ লেখা। যে কারণ দেখিয়ে সেই স্কুলের বাংলার শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করা হল, তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলা পক্ষ। আগামীকাল সোমবার হোলি চাইল্ড স্কুলের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে সংগঠনটি।
জানা গিয়েছে বাংলার শিক্ষিকা দেবস্মিতা রায় হোলি চাইল্ড স্কুলের দিবা বিভাগে ৯ মাস ধরে শিক্ষকতা করেছেন। দ্বিতীয় ভাষা বাংলা পড়িয়েছেন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ১৭ জন পড়ুয়াকে। শুক্রবারও গিয়েছিলেন স্কুলে। বিকেলে হঠাৎ চিঠিটা পাওয়ার পরই জানতে পারেন নতুন শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়ার সংখ্যা কমায় তাঁকে অব্যহতি দিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
তবে ওই শিক্ষিকাকে 'আজতক বাংলা'র তরফ থেকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বার বার তাঁর হিন্দি গানের কলারটিউন বেজে গেছে। পরে তিনি ফোন ধরলে এই প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে।
আরও পড়ুন-ফোড়া কাদের বেশি হয় জানেন? প্রতিরোধে আছে ৫ উপায়