বাংলাদেশ শান্ত হচ্ছে না। অশান্তি চলছেই। এখন হিন্দু সন্ন্যাসীকে গ্রেফতারের ঘটনায় উত্তাল পরিস্থিতি সেখানে। আর এতে বিপাকে পড়েছেন সেখানকার রোগীরা। যারা ভারতে চিকিৎসার জন্য আসতে চান। ভিসা নিয়ে জটিলতা শুরু হওয়ায়, তাঁরা আসতে পারছেন না বলে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে খবর। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের বেশিরভাগ অনেকাংশে নির্ভরশীল বাংলাদেশি রোগীদের উপর। কিন্তু অস্থিরতার কারণে কমেছে রোগী আসার সংখ্যা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা নেমেছে ৭৫ শতাংশেরও বেশি। যার জেরে কার্যত মাথায় হাত হাসপাতালগুলির।
এই সমস্যার প্রধান কারণ ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা। চিকিৎসার জন্য ভিসা পেতে বাংলাদেশি নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান সমস্যার কারণে ওপিডি এবং ভর্তির হার কমে গেছে। পাশাপাশি, রোগীদের স্বজনদের ভিসা পাওয়ার সমস্যাও বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে।
নারায়ণা হেলথ পরিচালিত আর এন টেগোর হাসপাতালের ওপিডি বিভাগে যেখানে প্রতিদিন ৩০০ জন বাংলাদেশি রোগী আসতেন, এখন তা কমে মাত্র ১০০-তে দাঁড়িয়েছে। মাসিক ভর্তির সংখ্যা ১৭০ থেকে কমে ৬০-এ নেমেছে। পিয়ারলেস হাসপাতালের পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। গড়ে প্রতিদিন ১৫০ জন ওপিডি রোগী আসার বদলে এখন মাত্র ৫০ জন আসছেন। ভর্তির সংখ্যাও ১০-১২ জন থেকে নেমে এসেছে দুই-তিন জনে।
বাংলাদেশি রোগীদের অভিযোগ, ভিসা পেতে এখন অসহনীয় সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। শুধুমাত্র ক্যান্সার রোগী বা জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে মেডিকেল ভিসা দেওয়া হচ্ছে। আগে ট্যুরিস্ট ভিসায় চিকিৎসা নিতে আসা এবং রোগীর সঙ্গীদের ভিসা দেওয়া হলেও বর্তমানে তা সীমাবদ্ধ।
ঢাকার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, পাঁচ মাস আগে ট্যুরিস্ট ভিসায় স্ত্রীকে নিয়ে আসতে সক্ষম হলেও সন্তানরা ভিসা না পাওয়ায় সঙ্গে আসতে পারেনি। চট্টগ্রামের একজন জানান, তার এক বন্ধু প্রতি বছর চেকআপের জন্য আসতেন, কিন্তু এবার ভিসা জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঢাকা-কলকাতা রুটে ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স আগে প্রতিদিন দুটি ফ্লাইট চালালেও এখন একটি ফ্লাইট চালাচ্ছে। বড় বিমানের পরিবর্তে ছোট বিমান ব্যবহার শুরু হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও তাদের ফ্লাইট সংখ্যা দুই থেকে একে কমিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশি রোগীরা ভারত সরকারের কাছে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আবেদন জানিয়েছেন। অনেক রোগীর নিয়মিত চেকআপ এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা এই সমস্যার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে, কলকাতার হাসপাতালগুলোও সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিচ্ছে। রোগীর সংখ্যা আরও কমে গেলে হাসপাতালের অর্থনৈতিক কার্যক্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতি শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসেবা নয়, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান দুই পক্ষের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।