কলকাতায় বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী শনাক্ত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দাবি করেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আনার ব্যবসায়ী বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহীন। তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক এবং সোনা চোরাচালানে কাজ করেন। তাকে গ্রেফতারের জন্য ভারত ও আমেরিকার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে বাংলাদেশ।
শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘অবশ্যই আমরা আখতারুজ্জামান শাহীনকে খুঁজছি। তিনি এই মামলার প্রধান সন্দেহভাজন এবং ওয়ান্টেড। আমরা তার বিচারের জন্য ভারতীয়, নেপালি এবং আমেরিকান আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য চেয়েছি। তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা কাজ করছি। সংসদ সদস্যের পরিবারের বিচার নিশ্চিত করতে আমরা ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছি বলে তিনি জানান, এ ঘটনায় এক মহিলা-সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের অপরাধ প্রেক্ষাপট রয়েছে। তার পটভূমি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব শিগগিরই এই হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটন হবে। তবে সোনা পাচারের টাকা নিয়ে আখতারুজ্জামান শাহীন ও সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মধ্যে বিরোধ চলছিল বলে জানা গেছে। শাহীনের কাছে পাচার করা ৬০ কেজি সোনার চালান হারিয়ে গেছে।
এ নিয়ে সাংসদকে সন্দেহ করতেন আখতারুজ্জামান শাহীন। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই তাদের সম্পর্কের ফাটল দেখা দেয়। শুক্রবার বাংলাদেশ পুলিশ তিন আসামি অর্থাৎ হানিট্র্যাপ গার্ল এবং দুই অভিযুক্ত খুনি আমানুল্লাহ আমান ও ফয়সাল আলীকে রিমান্ডে নিয়েছে, যাতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরো ষড়যন্ত্র বোঝা যায়। কলকাতা পুলিশ গ্রেফতারকৃত কসাই জিহাদকে রিমান্ডে নিয়েছে, যাতে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র, ঘটনার সাথে মৃতদেহ নিষ্পত্তির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়।
শাহীন আর আনার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। দুজনের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানা গেছে। আমেরিকায় আখতারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রাডারের বাইরে রয়েছেন। তার ভাই বাংলাদেশের ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র, যার নাম মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান। তিনি বলেন, "আমরা একসাথে বড় হয়েছি এবং এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে সে এমন জঘন্য অপরাধে জড়িত। যদি সে এই অপরাধে জড়িত থাকে, তাহলে তার শাস্তি হওয়া উচিত। দুই সপ্তাহ আগে আমি তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলাম। তখন খুব খুশি মনে হয় আমি তার এবং খুন এমপির মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পর্কে কিছুই জানি না।"
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, "মার্কিন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই, কিন্তু ভারতের আছে। আমাদের রাজ্যে অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় আমরা শাহীনকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করছি।" আনারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং ব্যবসায়িক অংশীদার শাহিন নিউইয়র্ক সিটিতে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে তার আমেরিকার নাগরিকত্ব রয়েছে।
তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১১ মে চিকিৎসার জন্য পশ্চিমবঙ্গে আসেন, কিন্তু ১৩ মে কলকাতা থেকে নিখোঁজ হন। এর পর তার হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ জানায়, আখতারুজ্জামান শাহীন বাংলাদেশি মডেল সেলেস্তে রেহমানের মাধ্যমে সাংসদকে কলকাতার নিউ টাউন এলাকার একটি অভিজাত এলাকায় অবস্থিত বাড়িতে আমন্ত্রণ জানালে সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়। আনারকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর তার লাশ টুকরো টুকরো করে বাংলাদেশি কসাই জিহাদ। এরপর তিনি আরও দুজনের সঙ্গে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাংসের টুকরোগুলো ফেলে দেন। তার শরীরের কোনও অংশ এখনো পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনজন বাংলাদেশ থেকে এবং একজন পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে।
আখতারুজ্জামান শাহীন ৩০ এপ্রিল ভারতে আসেন এবং ১০ মে বাংলাদেশে যান। ১৮ মে নেপালের ফ্লাইট নিয়ে দুবাই হয়ে আমেরিকা চলে যান। যাইহোক, কিছু সূত্র সন্দেহ করে যে হত্যার সময় তিনি ভারতে ছিলেন এবং কাজটি সম্পন্ন করার পরে চলে যান।