অবশেষে কাউন্টডাউন শেষ, পুজোর একমাস আগেই রাজ্যে ঢুকে পড়ল বহু প্রতিক্ষিত বাংলাদেশের পদ্মার বিখ্যাত ইলিশ। বুধবার বাংলাদেশ হাই কমিশনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়েছিল, ওপার বাংলার ইলিশ আমদানির ক্ষেত্রে প্রায়োজনীয় অনুমতি দেওয়া হয়েছে । তারপর রাতের মধ্যেই ইলিশ ঢুকেছে পেট্রাপোল সীমান্তে ৷ আজ থেকেই কলকাতা-সহ বিভিন্ন বাজারে সেই রুপোলি শস্য ছড়িয়ে পড়বে । এই বছরে ভারতে ইলিশ রফতানির জন্য অনুমোদন চেয়েছিল ১০০টি সংস্থা । তাদের মধ্যে ৯৬ টি সংস্থাকে ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে । অনুমোদিত সংস্থাগুলির প্রতিটিকে ৫০ টন করে ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
দুর্গাপুজো উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গে ৩,৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। অনুমোদিত সংস্থাগুলির প্রতিটিকে ৫০ টন করে ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জানা যাচ্ছে, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে রফতানিকৃত ইলিশ চলে আসবে এ রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গের বাজারে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশি ইলিশ পাওয়া যাবে। ভাইফোঁটা পর্যন্ত এই ইলিশ মিলবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
ভারতে এবার ৫০০০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির ছাড়পত্র দিয়েছে বাংলাদেশের হাসিনা সরকার। এর মধ্যে দেশের অন্যান্য প্রান্তে যাবে ৮০০ থেকে ১০০০ মেট্রিক টন ইলিশ। বাকি পুরোটাই পাবে পশ্চিমবঙ্গ। বুধবার রাতেই প্রথম লটের বাংলাদেশের ইলিশ ঢুকেছে এপারে। মোট ৩৭০০ থেকে ৩৮০০ টন ইলিশ ঢোকার পারমিশন মিলেথে একদিনে।
সবকিছু ঠিক থাকলে রবিবার থেকে খুচরো বাজারে পাওয়া যাবে পদ্মার ইলিশ। শনিবার থেকেই পাইকারি বাজারে ঢুকে পড়বে বাংলাদেশি ইলিশ। বাংলাদেশ প্রশাসন জানিয়েছেন,৪০ টন ইলিশ বুধবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ঢুকবে। শুক্রবার সকাল থেকে বড় বাজারগুলিকে বিক্রি হবে এই মাছ । এই বছরে ৩৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ আনার অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। এই মাস আমদানির জন্য ৪০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে । তাই এই অল্প সময়ের মধ্যে এত মাছ আমদানি সম্বভ কিনা তাই নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। সেক্ষেত্রে ১০০০-১৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি হতে পারে। যা বাজারে ১০০০-১২০০ টাকা প্রতি কেজিতে বিক্রি হতে পারে । এতে ইলিশের দাম কমবে।
বাংলাদেশ ও ভারতীয় মৎস্য ব্যবসায়ীদের সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, সপ্তাহে দুই অথবা তিন ধাপে মোট ২৫ টির মতো আলাদা পর্যায়ে ইলিশ ঢুকতে পারে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে। তবে কলকাতার মাছ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ পদ্মার ইলিশ রাজ্যে এলেও দাম কিন্তু নাগালের খুব একটা মধ্যে থাকবে না। ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা দাম হতে পারে এক কিলো ওজনের ইলিশের। তবে অষ্টমী , নবমী, ভাইফোঁটাতে কলকাতার বাজারে পদ্মার ইলিশের দাম চড়তে পারে। পদ্মার ইলিশ পেলেই দরাদরি শুরু হবে। চাহিদা অনুযায়ী দাম কমতে বা বাড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে ইলিশ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। নানা আলাপ আলোচনার পর ফের বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ আসতে শুরু করে ২০১৯ সাল থেকে। মূলত উৎসবকে কেন্দ্র করেই এদেশের মৎস্যবিলাসী মানুষের কথা মাথায় রেখে ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এর তরফে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবার উৎসবের মরশুমে বাংলাদেশের রুপোলি শস্য আমদানি করার ছাড়পত্র দেয় সরকার। বাংলাদেশ সরকারের সেই ছাড়পত্রে দেখা যাচ্ছে ২০১৯ সালে মাত্র ৫০০ মেট্রিক টন রূপালী শস্য আমদানির অনুমতি মিলেছিল। ২০২০ সালে সেই অনুমতির পরিমাণ আরেকটু বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৫০ মেট্রিক টন। এই দুই বছরই যা অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল সমস্ত ইলিশ আমদানি করা গিয়েছিল। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার ৪৬০০ মেট্রিক টন রুপোলি শস্য আমদানি করার অনুমতি দিলেও মাত্র ১২০০ মেট্রিক টন ইলিশ পাওয়া গিয়েছিল। ২০২২ সালে অর্থাৎ গত বছর অনুমতির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২৯০০ মেট্রিক টন। যদিও মাত্র ১৩০০ মেট্রিক টন আমদানি করা গিয়েছিল রুপোলি শস্য। কাজেই এ বছরও বাংলাদেশের হাসিনা সরকার প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আমদানির অনুমতি দিলেও শেষ পর্যন্ত কত ইলিশ আমদানি করা যাবে তা নিয়েই সংশয়ে রয়েছেন এদেশের মৎস্য ব্যবসায়ীরা।