বাংলাভাষীদের বিরুদ্ধে সন্দেহের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে? দেশজুড়ে একই সময়ে ‘বাংলাদেশি’ শনাক্ত করার অভিযান কেন? ঠিক জুন মাসকেই বা কেন বেছে নেওয়া হল? এই প্রশ্নই এবার তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি, বাংলায় কথা বললেই কাউকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করা হচ্ছে, এই অভিযোগ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আদালত।
'এমন সিদ্ধান্ত থেকে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে'
আজ অর্থাত্ বুধবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে এই বিষয়ে একটি মামলার শুনানি চলাকালীন, আদালত প্রশ্ন তোলে, দেশের নানা প্রান্তে হঠাৎ করে বাংলাদেশি শনাক্তের কাজ একযোগে কেন শুরু হল? এর পিছনে কি কোনও পরিকল্পনা আছে? একই সময়ে সব রাজ্যে এই অভিযান হলে তার পেছনে তো কেন্দ্রীয় স্তরে সমন্বয় থাকে। সেটাই জানতে চাই। আদালতের পর্যবেক্ষণ, 'অভিযোগ উঠছে, বাংলায় কথা বললেই অনেককে আটক করা হচ্ছে। এটা হলে কিন্তু সমাজে ভুল বার্তা যাবে। এমন সিদ্ধান্ত থেকে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।'
মোট ১৬৫ জনকে আটক করা হয়েছিল
এই মামলায় কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আদালতে সওয়াল করেন ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল ধীরজ ত্রিবেদী ও অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে হামলার পরে কিছু সন্দেহজনক গতিবিধির ভিত্তিতে কিছু মানুষকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তবে সবাইকে নয়। ধীরজ ত্রিবেদী জানান, মোট ১৬৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ৫ জন স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা বাংলাদেশি নাগরিক। বাকিদের যাচাই করা হচ্ছে। যাঁদের বিরুদ্ধে নিশ্চিত তথ্যপ্রমাণ নেই, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে মামলাকারীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, এই একই বিষয়ের উপর দিল্লি হাইকোর্টে আগে থেকেই একটি মামলা চলছে। অথচ সেই তথ্য গোপন রেখে কলকাতা হাইকোর্টে একই বিষয়ে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। কেন্দ্রের আইনজীবীদের বক্তব্য, 'আদালতের সামনে ভুল তথ্য পেশ করা হয়েছে। মামলাকারীরা দিল্লির মামলার কথা ইচ্ছাকৃতভাবে বলেননি।'
এই প্রসঙ্গে বিচারপতিরা মামলাকারী পক্ষের আইনজীবীকেও ভর্ৎসনা করেন এবং বলেন, 'দিল্লি আদালতে মামলা করেছেন, সেটা কেন কলকাতা হাইকোর্টে জানানো হয়নি? এটা কি গ্রহণযোগ্য আচরণ?' হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা সংক্রান্ত বিষয়গুলি ভবিষ্যতে দেখা হবে।