সাম্প্রতিক সময়ে বারবার সংবাদ শিরোনামে উঠে আসছে বিজেপি শাসিত রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাংলা ভাষায় কথা বলা পরিযায়ী শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার খবর । তাঁদেরকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে পুশব্যাক করার অভিযোগ উঠেছে । এই নিয়ে আগেই সরব হয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে । এবার রাজপথে নেমে সরাসরি এই ঘটনার প্রতিবাদ করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার ওই মিছিলে তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে থাকবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
রাজনৈতিক মহল বলছে, ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে বাঙালি অস্মিতায় শান দিতে ময়দানে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস। মাতৃভাষাকে অপমানের অভিযোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যআয় এদিন মিছিল করবেন কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ৷ কলজে স্কোয়্যার থেকে শুরু হয়ে মিছিল পৌঁছবে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে। মিছিল শেষে বক্তৃতাও করার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বলতে পারেন অভিষেকও।
আগামী সোমবার তৃণমূলের বার্ষিক সমাবেশ। তার আগেই এই মিছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে। কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও আজ মিছিল করবে রাজ্যের শাসকদল। সূত্রের দাবি, এই ইস্যুতে রাজধানী দিল্লিতেও প্রতিবাদের ঢেউ তুলতে চায় জোড়াফুল। প্রসঙ্গত, অসম, ওডিশা, দিল্লি, হরিয়ানা, ছত্তিসগড়, মহারাষ্ট্রও। বিজেপি শাসিত একের পর এক রাজ্য থেকে বাংলাভাষীদের হেনস্থার অভিযোগ আসছ। উঠছে পুলিশি হেনস্থার অভিযোগও। ছত্তিসগড়ে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য নদিয়ার ন’জন বাসিন্দাকে প্রথমে জেলে পুরে, পরে আবার বাসে তুলে সে রাজ্যের বাইরে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মহারাষ্ট্রের পুনেতে আবার যে বাঙালিদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের কাছে আধার কার্ডের পাশাপাশি সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের পরিচয়পত্রও ছিল। তাতে স্বাক্ষর রয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের। শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য যে ভাবে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে পদ্ম–শাসিত রাজ্য থেকে বাঙালিদের হেনস্থা করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ গোটা দেশে ছড়িয়ে দিতে চায় তৃণমূল।
অতীতেও এই নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে । কয়েকদিন আগেই বিধানসভায় তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, 'ভারত একটি বহু ভাষার দেশ । এখানে নানা ভাষায় মানুষ কথা বলেন । তাহলে বাংলা ভাষা বললে সে বাংলাদেশি হয়ে গেল ? বাংলাদেশের মানুষ যেমন বাংলায় কথা বলেন, তেমন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারাও তো বাংলায় কথা বলেন । তাই বলে কি তাঁদের বাংলাদেশি বলে ধরতে হবে? এটা কোথাকার যুক্ত !' মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, 'বিজেপি এখন ভাষার ভিত্তিতেই রাজনীতি করছে । তারা এমনিতেই বাংলার প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে । অথচ বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা খুব দক্ষ ও পরিশ্রমী । নানা রাজ্যে কাজ করতে যান তাঁরা । সেই শ্রমিকদের এখন 'বাংলাদেশি' বলে জেলে পুরে দেওয়া হচ্ছে, এটা ভয়ংকর অন্যায়।' শুধু তাই নয়,সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি এই নিয়ে পোস্ট করে লিখেছিলেন,'বাংলার মানুষ যদি নিজের দেশেই অনাহূত অতিথির মতো আচরণের শিকার হন, তাহলে বাংলা চুপ করে থাকবে না ।' এবার মুখ্যমন্ত্রীর রাজপথে নামার সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, ছাব্বিশের ভোটের আগে এই হাতিয়ারকে কাজে লাগাতে সচেষ্ট রাজ্যের শাসকদল ৷ আগামী বছর বঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বাঙালি হেনস্থাকেই বড় ইস্যু করে অমিত শাহ–নরেন্দ্র মোদীদের বিঁধতে চান তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই কারণে আজকের কর্মসূচি থেকে এই আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা ঘোষণা করতে পারেন তৃণমূলনেত্রী।