লন্ডন সফরে রয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সেখানেই শিল্প সম্মেলন করবেন তিনি। মঙ্গলবার লন্ডনের স্থানীয় সময় দুপুর ২ টোয় (ভারতীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়) সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেলে ১ নম্বর এডওয়ার্ডিয়ান হলে বসবে এই বৈঠক। বাকিংহাম প্যালেসের অদূরে এই হোটেলেই রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগেও লন্ডন সফরের সময়ে সেন্ট জেমস কোর্টেই ছিলেন তিনি। এদিনের বৈঠকের উদ্যোক্তা ইউকে ইন্ডিয়া বিজ়নেস কাউন্সিল, ফিকি এবং পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে নিউ টাউনে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আসর বসেছিল। সেখানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্রিটেনের শিল্পমহলের প্রতিনিধিরাও হাজির ছিলেন। লন্ডনে এদিন তাঁদের সঙ্গেই বৈঠক করবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এবারের সফরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার পাশাপাশি কাধিক ব্যবসায়িক আলোচনায় অংশ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর লক্ষ্য একটাই—পশ্চিমবঙ্গকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ মানচিত্রে আরও দৃঢ় জায়গা করে দেওয়া এবং কলকাতাকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তার অংশ হিসাবেই কলকাতা-লন্ডন সরাসরি বিমান পরিষেবার পুনরায় চালু করার অনুরোধ ভারতীয় রাষ্ট্রূতের কাছে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ভারতীয় দূতাবাস। সেখানকার বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থও। এই অনুষ্ঠানে বাংলায় শিল্প ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর দাবি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থেকে তথ্যপ্রযুক্তি— সব ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গ দ্রুত এগিয়ে চলেছে । তিনি বলেন, "এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম সেরা বিনিয়োগের গন্তব্য হল বাংলা।" মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প, যেমন— নিউটাউনের ইকোপার্ক ও মাদার ওয়াক্স মিউজিয়ামের প্রসঙ্গ। তিনি উল্লেখ করেন, কীভাবে তাঁর সরকার দার্জিলিঙে নিবেদিতার বাড়ি পুনরুদ্ধার করেছে এবং কীভাবে ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য কাজ চলছে। বাংলার নবজাগরণ এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে লন্ডনের সঙ্গে কলকাতার সম্পর্কের কথাও মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার সন্ধ্যায় ভারতীয় হাইকমিশনে পৌঁছলে মুখ্যমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান লন্ডনে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। এরপর তিনি ভারতীয় হাইকমিশনের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন এবং আলোচনা চক্রে অংশ নেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বসে বাংলায় লগ্নি টানার জন্য দৌত্য করলেন ব্রিটেনের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী। স্পষ্ট কথায় বললেন, বাংলায় লগ্নির জন্য বিলেতের বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতে এই দূতাবাস যথাসাধ্য করবে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক হল দক্ষ শ্রমিক। কেন্দ্রের সরকারও সমীক্ষায় জানিয়েছে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা বাংলাতেই সবচেয়ে বেশি রয়েছে। বাংলা বিনিয়োগ বান্ধবও বটে। শ্রম নিবিড় শিল্পে আরও বিনিয়োগ টানতে আগ্রহী তিনি। বাংলার হস্তশিল্প, সাংস্কৃতিক মূলধন ও মেধা উৎকর্ষের কথাও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। এও জানান, রাজ্যে লগ্নির পথ সহজ করতে সম্প্রতি একটি সমন্বয় কমিটিও গড়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, , কর্মসংস্থানের সেরা স্থান বাংলা। শিল্প স্থাপনের সেরা জায়গা এই রাজ্য। রাজ্যজুড়ে ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পে সেরা বাংলা। খড়গপুর আইআইটির মতো পড়ার জায়গা রয়েছে। নিউ টাউনে আইটি হাব তৈরি হচ্ছে। ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলার সম্পর্কের ইতিহাসও তুলে ধরেন তিনি। সেই কথা বলতে গিয়ে মাদার টেরেসা, সিস্টার নিবেদিতার অবদানের কথাও তুলে ধরেন। সবমিলিয়ে দু'দেশের দুই শহরের নাড়ির যোগ থেকে পারস্পরিক সহযোগিতা, শিল্প বিনিয়োগ থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে বন্ধন, প্রতিটি বিষয় উঠে আসে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়।