বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থানের পাশে থাকবে রাজ্য সরকার। গত বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সেই কথা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সপ্তাহের প্রথমদিন বিধানসভার অধিবেশন বসতেই ফের বাংলাদেশ নিয়ে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। স্পষ্ট বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’ সেইসঙ্গে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গত ১০ দিন ধরে ভারত সরকার নীরব থাকলেও একটা দল সীমান্ত আমদানি রফতানি বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট নির্দেশ দিলেই তা করা সম্ভব। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্র দরকারে শান্তিবাহিনী পাঠাক বাংলাদেশে।বিধানসভা অধিবেশনে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনারস সময় রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ”আমরা প্রস্তাব দিলাম। এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দিন। রাষ্ট্রসংঘের নজরে আনা হোক বিষয়টি।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গত ১০ দিন ধরে ভারত সরকার নীরব থাকলেও তার দল সীমান্ত আমদানি রফতানি বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট নির্দেশ দিলেই তা করা সম্ভব। আমরা যেকোন জাতি ধর্ম ও যে কোন ধরনের নৃশংসতার নিন্দা জানাই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি প্রয়োজনে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলুন বা বিদেশমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলুন। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরা আমাদের জনগণকে ফিরিয়ে নিতে চাই এবং আমি আশ্বাস দিচ্ছি যে তাদের কোনও খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হতে হবে না। আমি রাষ্ট্র সংঘকে বাংলাদেশে শান্তিরক্ষা কমিটি পাঠানোরও পরামর্শ দিচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন এবং তার যদি কোনও সমস্যা হয় তবে বিদেশমন্ত্রী কথা বলুন, এমন কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সময় বিজেপি বিধায়করা বিধানসভার ভিতরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, 'ভারতের ইতিহাস বুঝতে হবে। দেশভাগের পরে বাংলাদেশ, পাকিস্তান আলাদা হয়েছে। বাংলাদেশে যা সব হচ্ছে তা দুর্ভাগ্যজনক।' তাঁর কথায়, 'এটা কেন্দ্রের ব্যাপার। পররাষ্ট্রের ব্যাপার। তবে এও ঠিক যে, আমাদের অনেক বন্ধু আত্মীয়স্বজন বাংলাদেশে রয়েছে। ধর্ম, বর্ণ, জাতি যেখানেই আক্রান্ত হোক আমরা নিন্দা করি। আমরা চাই শান্তি ফিরুক। তা নিশ্চিত করা হোক। এই সভা থেকে প্রস্তাব নেওয়া হোক যে আমাদের বন্ধুদের ওপর যেন অত্যাচার না হয়।' মুখ্যমন্ত্রী এদিন অসন্তোষের সঙ্গে বলেন, 'গত ১০ দিন ধরে দেখছি, কেন্দ্রীয় সরকার চুপ করে আছে। তার দল রোজ মিছিল করছে। বলছে সীমান্ত আটকে দেব। খাবার দেব না। এটা আমাদের এক্তিয়ার নয়। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী কথা বলুন। বিদেশমন্ত্রী কথা বলুন। দুই দেশ কথা বলুক। নাহলে কেন্দ্র ভারতীয়দের ফেরাক। আমরা খাবার জোগাতে পারব।' বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকাকে লাগাতার অসম্মান করা হচ্ছে। সেই সব ছবি গত কয়েকদিন ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে সমাজমাধ্যমে। এ ব্যাপারে এপার বাংলায় বিপুল সংখ্যক মানুষের মনে ক্ষোভ ও রাগ তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, 'এভাবে জাতীয় পতাকার অমর্যাদা করা ঠিক হচ্ছে না। আমি ইস্কনের সঙ্গেও কথা বলেছি।' ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখন প্রায় সুতোয় ঝুলছে। বাংলাদেশের একটা বড় অংশের মানুষের মধ্যে যেমন পড়শি দেশ সম্পর্কে বিদ্বেষ দেখা যাচ্ছে। তেমনই হিন্দুদের উপর অত্যাচার দেখে ভারতের মানুষও ক্ষুব্ধ। এতে ভোগান্তিও হচ্ছে কিছু। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পশ্চিমবঙ্গের ৭৯ জন মৎস্যজীবী বাংলাদেশের জেলে আটকে রয়েছে। সরকার ট্র্যাক করেছে। আইনজীবী দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে তাদের। তাঁর কথায়, 'আমরা কেন্দ্রকে বলেছি। কিন্তু আজও তাদের মুক্তি দেওয়া হয়নি। অথচ এখানে বাংলাদেশের ট্রলার ডুবে গিয়েছিল। আমরা তাদের উদ্ধার করে দেশে পাঠিয়েছি। কিন্তু আমাদের লোককে ওরা ছাড়েনি। কেন্দ্রও ব্যাপারটা দেখুক।'
সুর চড়িয়ে স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”আজ বিধানসভা থেকে বলছি পার্লামেন্ট চলছে। প্রধানমন্ত্রীকে বলছি আপনারা বিবৃতি দিয়ে জানান। আর আমাদের লোকেদের ফিরিয়ে দিতে চাইলে আমরা তাদের এখানে ব্যবস্থা করে দেব। আমি খেতে পেলে তারাও পাবে। আমি ইসকনের সঙ্গে কথা বলেছি। জাতীয় পতাকার অপমান এভাবে হতে পারে না। কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। দরকারে ওই দেশে কেন্দ্র সরকার প্রতিনিধি পাঠাক শান্তির বার্তা নিয়ে, ধর্মীয় অধিকার পালন করার আছে।”