যৌথবাহিনীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মাওবাদী) সাধারণ সম্পাদক কেশব রাও ওরফে বাসবরাজু। পুলিশের খাতায় তাঁর মাথার দাম ছিল ১ কোটি টাকা। ২০২৬ সালের মধ্যে দেশকে মাওবাদী মুক্ত করার ডাক দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই লক্ষ্যেই বুধবার নারায়ণপুরের অবুঝমাড়েতে নিরাপত্তাবাহিনী নিকেশ করে এই শীর্ষ মাওবাদী নেতা-সহ ৩০ জনকে। পার্টি লাইন আলাদা, তা সত্ত্বেও কেন এই মাওবাদী নেতার হত্যা সমর্থন করছে না CPIM? এই নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে জুটছে দেশদ্রোহী তকমা, চলছে ধিক্কার। কী বলছেন বাংলার বাম নেতারা?
সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ লিখছেন, 'CPIM-এর আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে। ' কেউ বলছেন, 'মুখোশ খুলে গেল অবশেষে। দিনের শেষে সব বামের আসল উদ্দেশ্য একই। দেশের ভিতরের শত্রুদের সম্পর্কে সচেতন থাকুন।' জনৈক নেটিজেন লিখেছেন, 'কী দুর্দশা এই পার্টিটার। আজ মাওবাদী নিধনে দুঃখিত হয়ে স্টেটমেন্ট প্রকাশ করতে হচ্ছে। আবার কিছু নেতা বলে বেড়ায় বাম-অতিবামকে এক করবেন না। একরাশ ধিক্কার'।
CPIM পলিটব্যুরো বিবৃতিতে এই হত্যার তীব্র নিন্দা করে উল্লেখ করেছে, 'মাওবাদীরা বারবার আলোচনার প্রস্তাব দিলেও BJP পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার এবং ছত্তিশগড় রাজ্য সরকার সেই পথে হাঁটেনি। বরং বেছে নেওয়া হয়েছে অমানবিক হত্যাযজ্ঞ।' এছাড়াও CPIM অভিযোগ করেছে, কোনও আলোচনার রাস্তায় না গিয়ে ডেডলাইন ঘোষণা করে মাওবাদীদের নির্মূল করার যে নীতি সরকার গ্রহণ করেছে তা ফ্যাসিস্টসুলভ এবং গণতন্ত্র বিরোধী।
BJP নেত্রী কেয়া ঘোষ লেখেন, 'বামপন্থী মানেই দেশদ্রোহী। নরম বাম, গরম বাম বা উগ্র বাম সবাই এক। এরা একই কয়েনের এপিঠ-ওপিঠ। মাওবাদী নেতা বাসবরাজু সহ আরও ২৬ জনকে নিকেশ করে সরকার নাকি অন্যায় করেছে! ২০০৪ থেকে আজ পর্যন্ত ৯ হাজার মানুষকে যে সংগঠন খুন করেছে তাদের জন্য চোখের জল ফেলছে সেলিমের দল।'
লাগাতার এই আক্রমণ প্রসঙ্গে bangla.aajtak.in-কে CPIM নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'মাওবাদী রাজনীতির মানে কী এবং এর কী প্রভাব অথবা কাদের সঙ্গে জড়িত, পশ্চিমবঙ্গে এর ভূমিকা কী, সবটাই আমাদের পার্টির তরফে স্পষ্ট করা হয়েছে। মাওবাদীরা কাকে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চেয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখার পর কিষেণজি খুন হয়ে গিয়েছেন। সেই মাওবাদী নেতারা তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। প্রকাশ্যে সকলেই তা দেখেছেন।' তাঁর আরও বক্তব্য, 'আমরা মাওবাদী রাজনীতির পক্ষে নই এটা যতটা স্পষ্ট তেমন মাওবাদীরা আলোচনা চাওয়ার পরও খুন করা হল, এই যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন তো আমাদের থাকবেই। আমরা এই পদ্ধতির পক্ষপাতি নই, সেটাই বলেছি। এর রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।'
CPIM নেতা সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, 'মাওবাদীরা যখন মৌখিক কথাবার্তার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে চেয়েছিল, তখন সেই সুযোগ তাদের না দিয়ে নির্বিচারে বিচার-বহির্ভূত গণহত্যা সমর্থন করা যায় না। হাতে যদি সবচেয়ে বেশি কোনও পার্টির লোক খুন হয়ে থাকে, তবে সেটা আমরা। এদের বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে কী নৃশংসভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়ার মতো জেলাগুলিতে, তা সকলেই জানে। কিন্তু কোনও কমিউনিস্ট পার্টিই রাষ্ট্রের উদ্যোগে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকে সমর্থন করতে পারে না। তথাকথিত মাওবাদীদের প্রতি আমাদের কোনো বাড়তি দুর্বলতা নেই। রাজনীতির ফারাক থাকা সত্ত্বেও বলছি, তারা যখন পিস টকের আবেদন করেছে বারবার তখন সরকারের উচিত পিস টকে যাওয়া। খুনজখম করে কোনও সমস্যাই শেষ অবধি মেটে না।'
বাসবরাজুর হত্যার নিন্দা জানিয়েছে, CPIML(লিবারেশন), SUCI, CPI(M-L) নিউ ডেমোক্রেসি, CPI(M-L) মাস লাইন, CPI(M-L) রেড স্টার সহ সমস্ত বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলিই।
CPIML(লিবারেশন)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, 'অপারেশন কাগরের তীব্র নিন্দা করছি। অবিলম্বে বিচার বহির্ভূত হত্যা থামাতে হবে।'