নন্দীগ্রাম বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে উপ-নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১-র উপনির্বাচন ও ২০১৬-র ভোটে এই কেন্দ্র থেকেই জিতেছিলেন তিনি। শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, ২০১১ সাল থেকে এই কেন্দ্রে ভালো ফল করে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১১, ২০১৬ ও ২০২১-এর নির্বাচন, প্রতিবারই তৃণমূলকে বিপুল ভোটে জিতিয়েছে ভবানীপুর।
এক নজরে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র
নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এই কেন্দ্রে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৫১ সালে। কংগ্রেস প্রার্থী মীরা দত্ত গুপ্ত এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন। এরপর ১৯৫৭ সালের বিধানসভা ভোটে ওই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়ান বিধানচন্দ্র রায়। জেতেন তিনি। মন্ত্রিসভায় আইন ও আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব পান। ১৯৬২-তে পরবর্তী নির্বাচনেও জয়ী হন। তবে সেই বার কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব হয়ে গিয়েছিল তাঁর। জেতেন নির্দল হিসেবে।
তৃণমূলের জয়ের খতিয়ান
২০১১ সাল থেকে ২০২১- পরপর ৪ নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে জয় পান তৃণমূল প্রার্থীরা। ২০১১ সালে সুব্রত বক্সী জেতেন বাম প্রার্থী নারায়ণপ্রসাদ জৈনের বিরুদ্ধে। তাঁকে ৩৬ %-এরও বেশি ভোটে পরাজিত করেন সুব্রত বক্সী।
আবার ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে জিতে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ে তিনি ছিলেন সাংসদ। ফলে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর উপনির্বাচনে লড়তে হয়েছিল তাঁকে। তখন ভবানীপুর কেন্দ্রকে বেছে নিয়েছিলেন মমতা। প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচন লড়েন এই কেন্দ্র থেকেই। জেতেনও।
২০১৬ সালেও ওই কেন্দ্র থেকেই তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ফের দাঁড়ান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সিকে ১৮ শতাংশেরও বেশি ভোটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন।
২০২১ সালে ওই কেন্দ্র থেকে আর প্রার্থী হননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নামেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী BJP-র রুদ্রনীল ঘোষকে পরাজিত করেন ২২.৮% শতাংশ ভোটের ব্যবধানে। কলকাতা পুরসভার ৮টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি এই কেন্দ্রে গত নির্বাচনে ৬টিতে এগিয়েছিল তৃণমূল। বাকি দুটিতে BJP।
সার্বিক ফলে রুদ্রনীল ঘোষকে ২৮ হাজার ৭১৯ ভোটে হারিয়ে দেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এর মধ্যে ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়েছিল সবচেয়ে বেশি ভোটে। আবার ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে লিড ছিল বিজেপির।
লোকসভার নিরিখে ভবানীপুরে ভালো ফল করে এসেছে BJP
লোকসভা ভোটের নিরিখে ২০১৪ সাল থেকে বিধানসভাওয়াড়ি ফলাফলে ভবানীপুরে ভালো ফল করে আসছে গেরুয়া শিবির। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভাওয়াড়ি ফলাফলে ভবানীপুরে থেকে ১৭৬ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত বক্সী। সেবার তৃণমূল এই কেন্দ্র থেকে পেয়েছিল ৪৭,২৮০ ভোট। বিজেপির ঝুলিতে পুরেছিল ৪৭,৪৫৬টি ভোট। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভাওয়াড়ি ফলাফলে ভবানীপুরে কড়া টক্কর দেয় BJP। মাত্র ৩ হাজারের সামান্য ভোটে BJP প্রার্থীর থেকে এগিয়ে ছিল TMC-র মালা রায়।
২০২১ উপনির্বাচন
২০২১ উপনির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে ফের প্রার্থী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। নিজের 'ঘাঁটি' ভবানীপুরে মমতার এবারের লড়াই BJP-র প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল ও বামপ্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। ২০১১ থেকে এই কেন্দ্রে টানা জিতে এসেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। এবারও কি সেই ধারা অব্যাহত থাকবে? ফলাফল জানা যাবে ৩ অক্টোবর।