কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেস অফিস বিধান ভবনে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেফতার বিজেপি নেতা রাকেশ সিং। কলকাতার ট্যাংরা এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার রাকেশকে শিয়ালদা আদালতে পেশ করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার পরেই রাকেশের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন সহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে এই ঘটনায় মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়, যাঁদের মধ্যে রাকেশের ছেলে শিবম সিংও রয়েছেন। বাকি তিনজন হলেন বিজয়প্রসাদ ধানুক, সন্তোষকুমার রাজভর ও দিব্যেন্দু সামন্ত। এঁরা সকলেই ঘটনায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন বলে দাবি তদন্তকারীদের।
প্রসঙ্গত, বিহারের দ্বারভাঙায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মায়ের উদ্দেশ্যে কিছু কুকথা বলেছিলেন কংগ্রেসের এক নেতা। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল বাংলাতেও। কলকাতায় কংগ্রেসের সদর দফতরে ঢুকে BJP নেতা রাকেশ সিং তার অনুগামীদের নিয়ে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ ওঠে। রাকেশ সিং-সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে, যখন বিধান ভবনের ভেতরে কংগ্রেসের কোনও শীর্ষনেতা উপস্থিত ছিলেন না। ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান রাকেশ সিং। যদিও তিনি সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন এবং একাধিক ভিডিও বার্তায় দাবি করেন, পুলিশ তাঁর পরিবারকে হয়রানি করছে। ছেলে শিবমের গ্রেফতারির প্রতিবাদে তিনি কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মাকে প্রকাশ্য হুঁশিয়ারিও দেন। তবে শেষরক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার রাতে ট্যাংরা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের একটি বিশেষ দল। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন রাজ্য বিজেপির এই নেতা। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে পামেলা গোস্বামী মদক মামলাতেও নাম জড়িয়েছিল রাকেশ সিং-এর। চিড়িয়াখানায় গোলমাল–সহ বেশ কিছু বিতর্কেও শোনা গিয়েছিল তাঁর নাম।
প্রসঙ্গত, ড্রাগ কাণ্ডে ধৃত বিজেপি নেত্রী পামেলা গোস্বামীর মুখে সেইসময় বারবার উঠে এসেছে বিজেপির প্রভাবশালী নেতা রাকেশ সিংয়ের নাম। গ্রেফতার হওয়ার পর প্রথম যেদিন পামেলাকে আদালতে তোলা হয়, সেই সময় তিনি সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বারবার ২০১৮ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাকেশ সিংয়ের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলেছিলেন। পরে এই মামলায় গ্রেফতারও হতে হয় রাকেশ সিংকে। ২০২১–এর ফেব্রুয়ারি মাসে রাকেশকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, ৯ মাস পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান। অভিষোগ প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ারও দাবিও করেছিলেন রাকেশ সিং।
এমনিতে বন্দর এলাকায় যথেষ্ট ডাকাবুকো নেতা হিসেবে পরিচিত রাকেশ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ঠিক আগে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল। প্রায়শই ‘গরম-গরম’ মন্তব্য করে থাকেন তিনি। রাকেশ সিংয়ের বিরুদ্ধে অতীতে পঞ্চাশটির বেশি ফৌজদারি মামলা ছিল। চিড়িয়াখানার কর্মী সংগঠনের দখল নিয়ে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বিজেপি-তৃণমূলের খণ্ডযুদ্ধেও নাম জড়িয়েছিল বিজেপির এই নেতার।