প্রায় ১৩৪৭ কোটি টাকা অন্য দফতরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে. বিরোধী দলনেতার দাবিফের উত্তরবঙ্গ সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠক রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন তিনি। বিশেষ করে ত্রাণ বিতরণ, ভেঙে পড়া সড়ক ও সেতুর পুনর্নির্মাণের কাজ কতদূর এগিয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, যেসব পরিবারের বাড়িঘর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভেঙে পড়েছে, তাঁদের হাতে আর্থিক সহায়তাও তুলে দেবেন। এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর এই কর্মসূচি নিয়ে কটাক্ষ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশি গত ১৪ বছর ধরে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। অবৈধ ভাবে টাকা এক দফতর থেকে অন্য দফতরে ‘হস্তান্তর’ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
শনিবার কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির নাম পরিবর্তন করে নিজেদের কৃতিত্ব দেখানোর চেষ্টা করছে এবং কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তহবিলের অপব্যবহার করছে। সোমবার শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'এই রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে দিচ্ছে। আর সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক নয়ছয় করছে।' তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় কেন্দ্রীয় নিরীক্ষা সংস্থা ক্যাগের রিপোর্ট পেশ করা হচ্ছে না।
সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এখন নতুন করে বাড়ি তৈরির এক কর্মসূচি নিচ্ছেন, যার নাম দিয়েছেন বাংলার বাড়ি প্রকল্প। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বহু আগেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা চালু করেছিলেন। তাঁর দাবি, '২০২৩ পর্যন্ত এই প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার কেন্দ্র থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার অনুদান পেয়েছে।' বিজেপি বিধায়কের আরও অভিযোগ , তৃণমূলের একাধিক নেতা এই প্রকল্পে দুর্নীতি করেছেন। বিরোধী দলনেতার দাবি, 'নওদার তৃণমূল নেতা ৩৫ টি, সাগরদিঘির তৃণমূল নেতা ১৭টি করে বাড়ি নিজেদের নামে বা ঘনিষ্ঠদের নামে নিয়েছেন। অথচ যারা প্রকৃতভাবে ঘর পাওয়ার যোগ্য, তারা বঞ্চিত।'
শুভেন্দুর দাবি, চলতি অর্থবর্ষে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য এসডিআরএফ-এ কেন্দ্রীয় সরকার ৯৮৩ কোটি টাকা দিয়েছে। আর গত পাঁচ বছরে তাঁরা মোট ৪ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু এই টাকা ‘নয়ছয়’ করছে রাজ্য। বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলের টাকা রাজ্য সরকার অন্য দফতরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বিরোধী দলনেতার কথায়, 'এই টাকা অন্য কোনও দফতরে পাঠানো যায় না। কিন্তু উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এই টাকা পিএনআরডি বা পঞ্চায়েত দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ওখানে একজন ‘ভাইপো ম্যান’ রয়েছেন। মনোজ পন্থ নিজে সই করেছেন। এগুলো হতে পারে না।'
শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী আজ কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া ফান্ড থেকেই নতুন প্রকল্পের নামে টাকা দিচ্ছেন।' বাংলার বাড়ি প্রকল্পের অর্থ আসলে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের জন্য বরাদ্দ তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ নিয়মবিরুদ্ধ। বিরোধী দলনেতার দাবি, প্রায় ১৩৪৭ কোটি টাকা এইভাবে অন্য দফতরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুভেন্দু বলেন, 'রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলায় ৫ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যার মধ্যে ৩ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে। সেই টাকার থেকে ১৩৪ কোটি টাকা অন্য খাতে খরচ করছে মমতার সরকার। যা বেআইনি। অপরাধ।' আর এই আর্থিক অনিয়মের জন্যই ক্যাগ রিপোর্ট (CAG Report) চাইলেন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, এ ব্যাপারে তিনি রাজ্যপাল তো বটেই, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও জানানো হবে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে এই দুর্নীতি নিয়ে জনস্বার্থ মামলাও করা হবে।