শুভেন্দু অধিকারী ও লিওনেল মেসিশনিবার যুবভারতীতে বিশৃঙ্খল ঘটনার পর থেকে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। ঘটনা নিয়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজ্যের শাসক দলকে একযোগে আক্রমণ করেছে বিরোধী শিবির। ক্ষুব্ধ ফ্যানেরাও। কেন দিল্লি, হায়দরাবাদ ও মহারাষ্ট্র পারলেও, পশ্চিমবঙ্গ মেসিকে ১ ঘণ্টার জন্যও যুবভারতীতে রাখতে পারল না, তা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন উঠেছে।
যেহেতু ঘটনার দিন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী, কিছু তারকাকে মেসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে ছবি তুলতে দেখা গিয়েছে, তাই শাসক দলের দিকে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এরইমধ্যে নতুন প্রতিশ্রুতি দিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
রবিবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা উত্তর ২৪ পরগনার লেনিনগড়ে একটি সভা থেকে বলেন, "বিজেপিকে আনুন। যদি মহারাষ্ট্রের দেবেন্দ্র ফড়নবিশ পারেন, হায়দরাবাদ যদি পারে, দিল্লিতে যদি রেখা গুপ্তা পারেন, তাহলে আগামী দিনে বিজেপি এলে আমরাও মেসিকে নিয়ে আসব। কীভাবে খেলা করতে হয় তা আমরাও দেখাব। যদি চন্দ্রবাবু নাইডু পারেন, রেখা গুপ্তা আর দেবেন্দ্র ফড়নবিশও পারেন, তবে আগামী দিনে বাংলার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীও পারবে।"
উল্লেখ্য, শনিবার যুবভারতীর উপর বিশৃঙ্খলার 'ঝড়' মাত্র মিনিট ২০ হলেও, তার রেশ এখনও রয়েছে। ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার দায় চাপানো হয়েছে অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তকে। ঘটনার দিনই কলকাতা বিমানবন্দর থেকে তাঁকে আটক করা হয়। এরপর আদালতের নির্দেশে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রয়েছেন এই আয়োজক।
ঘটনা কী ঘটেছিল?
শনিবার সকাল থেকেই স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় জমাতে শুরু করেন ফুটবলপ্রেমীরা। সকাল আটটা নাগাদ গেট খোলার পর থেকে গ্যালারি ভরতে থাকে। চড়া রোদে দীর্ঘ অপেক্ষার পর বেলা ১১টা ৩০ মিনিট নাগাদ মেসি মাঠে প্রবেশ করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ় এবং রদ্রিগো ডি’পল। গ্যালারি জুড়ে তখন উচ্ছ্বাস, করতালি, স্লোগান।
কিন্তু সমস্যা শুরু হয় মাঠের মধ্যেই। মেসি নামার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে ঘিরে ধরেন নেতা-মন্ত্রী, ভিভিআইপি, পুলিশকর্তা এবং তাঁদের সঙ্গীরা। নিরাপত্তার চাদরের চেয়েও বেশি তৈরি হয় এক ‘মানবপ্রাচীর’, যার আড়ালে কার্যত আড়ালেই থেকে যান মেসি। গ্যালারি থেকে তাঁকে দেখার কোনও সুযোগই পাননি বেশিরভাগ দর্শক।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বারবার মাইকে অনুরোধ করেন অনুষ্ঠানের প্রোমোটার শতদ্রু দত্ত। মাঠ ফাঁকা করার আবেদন জানানো হয়, মেসিকে জায়গা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু সেই অনুরোধ কার্যত উপেক্ষিতই থেকে যায়। উলটে ভিড় আরও বাড়তে থাকে, অনেকেই সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেই মেসি কিছুটা বিস্মিত, কিছুটা অস্বস্তিকর ভঙ্গিতে মাঠে ঘোরার চেষ্টা করেন। প্রাক্তন ফুটবলারদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন, স্বাক্ষর দেন। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মেসির টিম সিদ্ধান্ত নেয়, তাঁকে আর মাঠে রাখা নিরাপদ নয়। এরপরই তাঁকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।
LM10 বেরিয়ে যেতেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। ক্ষুব্ধ দর্শকদের একাংশ ভাঙচুরে জড়িয়ে পড়েন। চেয়ার, বোতল ছোড়া, ফেন্সিং ভাঙা-সব মিলিয়ে যুবভারতী কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।