গত দু’বছর ধরে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। নেই চাকরি, নেই নিয়োগ, বন্ধ একের পর এক চাকরির পরীক্ষা। যার জেরে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন চাকরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে শ্রমিকরা। এরই মাঝে আরও এক খারাপ খবর। বন্ধ হয়ে গেল তারাতলায় ব্রিটানিয়া কোম্পানির বিস্কুট কারখানা।
জানা গিয়েছে মে মাস থেকেই এই কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। এবার একেবারেই ঝাঁপ পড়ল কারখানার। যার জেরে নিমেষে কর্মহীন হয়ে পড়লেন বহু শ্রমিক। ঠিক কী কারণে হঠাৎ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সে বিষয়ে অবশ্য কিছু জানায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কলকাতার বুকে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছিল ব্রিটানিয়া কোম্পানির এই কারখানা। কারখানায় স্থায়ী কর্মী ছিলেন ১২২ জন। অস্থায়ী কর্মী ছিলেন ২৫০ জন। স্থায়ী কর্মীদের এককালীন ক্ষতিপূরণ দিয়েছে কোম্পানি। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন অস্থায়ী কর্মীরা।
মঙ্গলবার ম্যানেজমেন্টের বৈঠক রয়েছে। সেদিন বোঝা যাবে কর্তৃপক্ষ আদৌ আর কারখানা খুলবে কিনা। নাকি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধই হয়ে গেল। বন্দরের জমির উপরে গড়ে উঠেছিল ব্রিটানিয়ার কারখানা। ৯৯ বছরের লিজে নেওয়া হয়েছিল ওই জমি। সেই জমি নিয়ে কিছু হয়েছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে আগামিকাল অস্থায়ী কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তখন বোঝা যাবে অস্থায়ী কর্মীদের ভবিষ্যত কী হবে। এই কোম্পানিতে আড়াই হাজার টন উৎপাদন হত প্রতিবছর। কর্মীরা কাজে গিয়ে হঠাৎ করেই কারখানার গেটে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস দেখতে পান।
কারখানার শ্রমিকদের দাবি, কারখানায় অনেক ভালো উৎপাদন হত। লাভও প্রচুর হয়। তার পরেও কেন যে কারখানা বন্ধ হয়ে গেল তা বোঝা যাচ্ছে না। এদিকে কোম্পানির কিছু স্থায়ী কর্মীদের কথায়, সংস্থা জানিয়েছে প্রতিযোগিতার বাজারে তারা টিকে থাকতে পারছেন না। তাই আপাতত এহেন সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, স্থায়ী কর্মীদের ১৩ লক্ষ টাকা থেকে ২২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিয়েছে তারাতলার ব্রিটানিয়া কোম্পানি। ১০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে কাজ করা কর্মীরা সবথেকে বেশি টাকা পেয়েছেন, ২২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। ৬ থেকে ১০ বছরের নীচে যারা চাকরি করেছে, তাঁদেরকে ১৮ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা দিয়েছে কোম্পানি। আর তারও কম সময়ে যারা কর্মরত ছিল তারা ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে পেয়েছে।
দেশের অন্যতম বড় খাবার প্রস্তুতকারী সংস্থা ব্রিটানিয়া এবং পশ্চিমবঙ্গে তাদের তৃতীয় বৃহত্তম মার্কেট। বছরে ৯০০ কোটি টাকার বেশি লাভ করে এই কোম্পানি। তবে তারাতলার কারখানা বন্ধ হলেও বিস্কুট উৎপাদনের কাজে কোনও ব্যাঘাত ঘটবে না বলে কোম্পানির এক আধিকারিক দাবি করেছেন।