লকডাউনে দাদার বেতন কমে এক ধাক্কায় অর্ধেক। বলতে গেলে তিনিই সংসারের একমাত্র রোজগেরে। সংসার চলবে কী করে, তার লেখাপড়ার হবে কী? এমনই একের পর এক প্রশ্ন ঘিরে ধরেছিল বোনকে। আর্থিক সমস্যার কারণেই তো দাদার লেখাপড়া ঠিক মতো করা হল না। তবে টাকাপয়সাকে এবার ওঁরা অন্তরায় হতে দিল না।
দাদা-বোন নিজেরাই শুরু করল ছোট ব্যবসা। খাবারের ব্যবসা। তবে একটু ভিন্ন স্বাদের। বাড়ির কাছেই শুরু হল ফুচকার দোকান। কলকাতা যেমন ফুচকার সঙ্গে অভ্যস্ত, তার থেকে অনেকটা আলাদা। দোকানের নাম পড়ল 'ফুচকাওয়ালা'।
তাঁরা দেবজ্যোতি সাহা এবং জ্য়োতির্ময়ী। থাকেন টিটাগড়ের বিবেকনগরে এলাকায়। আর তাদের দোকান খড়দায়। তাদের ফুচকা যেমন দোকানে গিয়ে খাওয়া যেতে পারে, তেমনই অনলাইনেও আনা যেতে পারে।
মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা তাঁদের। মা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, বাবা ছোট ব্যবসায়ী। তবে আর্থিক অনটন ছিল। গত ১০-১২ বছর ব্যবসা প্রায় ধরে বন্ধই ছিল। দেবজ্যোতি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন, প্রিন্টিং নিয়ে। শুক্রবার জানালেন, টাকাপয়সার জন্য বিটেক করতে পারিনি। প্রিন্টিং ক্ষেত্রে কাজ করতেন।
তবে লকডাউনের সময় বেতন কমে হয়ে গেল অর্ধেক। কিছু ঋণ ছিল। এর ওপর বাড়ি কেনার ঋণ। কী ভাবে কী করা যায়, ভেবে কূলকিনারা নেই। অনেকে বললেন, যে দোকান রয়েছে, তা বিক্রি করে দিতে। সেটি মুদিখানার দোকান। সোজা না করে দেন। ভাগ্যিস না করেছিলন!
এরপর তাঁরা ঠিক করেন খাবার নিয়ে কিছু করা যায় কিনা, দেখা যাক। তবে রোল-চাউমিন নয়, অন্য কিছু। যেমন ভাবা তেমন কাজ। অনেক বাবার পর মাথায় এলো ফুচকা নিয়ে কিছু করলে কেমন হয়। আর এতদিন সবাই যেমনন ফুচকা খেয়ে এসেছেন, তেমন ন। সেখানে আলাদা কিছু।
ফুচকার বিভিন্ন রকম আইটেম পরীক্ষা করা শুরু করলেন। সেই কাজে নেমে পড়লেন আত্মীয়রাও। তখন ৩০-৪০ রকমের ফুচকা তৈরি করেন। এর মধ্যে থেকে ৭-৮ বেছে নেন। পারিবারিক মুদিখানার দোকান সাজিয়ে-গুছিয়ে খোলা হয়। দেবজ্যোতি বলেন, অনলাইনে প্রচার করি। ফেসবুক পেজে আপলোড করতে থাকি। জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। এগুল কাজ দিয়েছিল।
ঠিকঠাকই চলছিল। বোনের প্রথম সেমিস্টারে লেখাপড়ার খরচ সেখান থেকেই এসেছিল। তবে একন সামান্য সমস্য়ায়। কারণ আংশিক লকডাউনের কারণে বেশ কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। তিনি চাকরি করেন আর বোন লেখাপড়া। আর এর ফাঁকেই দু'জন দিব্যি নিজেদের ব্যবসাও চালাচ্ছেন। দেবজ্যোতির অফিস ওয়েলিংটনে। এখন ওয়ার্ক ফ্রম হোম।
তিনি জানান, স্বামী বিবেকানন্দ মেধাবৃত্তি পাওয়ার কথা বোনের। তবে এ জন্য পরিবারের আয়ের শংসাপত্র লগাবে। আংশিক লকডাফনের কারণে তা পেতে দেরি হচ্ছে। আর বোনের কলেজ থেকে তাড়া দিচ্ছে। প্রশাসনের কাছে আর্জি, এটা দ্রুত পাওয়া গেলে খুব উপকার হয়।
দোকান সাজানো হয়েছে বেশ ছিমছাম ভাবে। আর তার দায়িত্ব বোনের। তিনি জানান, ছোট থেকে হাতের কাজ ভাল। বোন সাজিয়েছে দোকান।
কী কী ফুচকা
সেখানে পাওয়া যায় চিকেন ফুচকা। দাম ৮০ টাকা। তাগের সব ফুচকার প্লেটেই থাকে ৬টি করে ফুচকা। সাধারণ ফুচকা ১০ টাকায় ৮টা। তাঁর দাবি, ১০ টাকায় ৮টি ফুচকা আর কোথাও পাওয়া যায় না। আইসক্রিম ফুচকা ৬০ টাকা। দহি (দই) ফুটকা, ধনিয়া ফুচকা ৩০ টাকা করে। খাট্টামিঠা ৪০ টাকা। বিয়ের সময় তৈরি করেন চিংড়ি ফুচকা। এখন ১০ রকমের ফুচকা রয়েছে।
পাওয়া যায় বাংলাদেশি ফুচকা। যা এক জনপ্রিয় আইটেম। ঢাকায় যেভাবে তৈরি হয় ডিম দিয়ে, তেমন ভাবে তৈরি হয় সেটি। দাম ৭০ টাকা। ফুচকার পাশাপাশি সেখানে চকোলেট শেক পাওয়া যায়। আউটলেটের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।