স্ত্রী সামান্য চাকরি করলেও তিনি তাঁর খোরপোষ বা ভরনপোষণের খরচের জন্য অর্থ দাবি করতে পারেন। একটি খোরপোষের দাবি সংক্রান্ত মামলায় জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি অজয় মুখোপাধ্যায় নির্দেশে জানিয়েছেন, সিআরপিসি ১২৫ অনুযায়ী একজন স্ত্রী তাঁর স্বামীর মতোই বা বলা যায় একই মানের জীবনযাপনের দাবি করতে পারেন। স্ত্রী সামান্য রোজগেরে মানেই খোরপোশের দাবি জানাতে পারবেন না স্বামীর কাছে তা সঠিক নয়। বিশেষত স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন যেখানে আর্থিকভাবে স্ত্রীর বাপের বাড়ির লোকজনের থেকে উন্নত,সেখানে স্ত্রী সেই দাবি করতেই পারেন। এমনটাই জানাল কলকাতা হাইকোর্ট।
মামলাকারী মহিলা পানাগড়ের বাসিন্দা। কলকাতার তালতলার বাসিন্দার সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। ২০১২ সালের ৪ অগাস্ট বিয়ে হয় ১৯৫৪ সালের স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে। রেজিস্ট্রি করার পর দু'জনেই দুজনের বাড়িতে ফিরে যান। এরপর একাধিকবার দু'জনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়েছেন। একে অপরের বাড়িতে কিছুদিন করে থেকেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘর সংসার করা যাকে বলে সেই বিষয়টি সেই অর্থে হয়নি। কারণ বনিবনা হয়ে ওঠেনি। মহিলার দাবি, তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু ছেলেটির পরিবারের লোকজন তাঁকে জোর করে কলকাতার তালতলার বাড়ি থেকে চলে আসার জন্য জোরজারি করেন। এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদ করার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।
বাধ্য হয়ে মামলাকারী ২০১৩ সালের ১৬ অগাস্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। একাধিকবার তিনি কলকাতার তালতলার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে ঢুকতে দেননি বলেই অভিযোগ। এমনকি তাঁর স্ত্রীধন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে সিআরপিসি ১২৫ ধারায় ১০ হাজার টাকা খোরপোশ দাবি করে মামলা দায়ের করেন তিনি । ২০১৫ সালে নিম্ন আদালত মহিলার দাবি মেনে নিয়ে মাসিক চার হাজার টাকা করে খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দেয় স্বামীকে। সেইসঙ্গে মামলা করার খরচ হিসেবে ৫০০০ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে কলকাতা হাইকোর্ট ও সেই নির্দেশ বহাল রাখে। কিন্তু ২০২৩ সালের ৮ জুন কলকাতার ফ্যামিলি কোর্টের মুখ্য বিচারক এক নির্দেশে স্ত্রীর এই খোরপোশের আবেদন বাতিল করে দেন। বাধ্য হয়ে ফের ওই মহিলা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
আদালতে যুবকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় তাঁর পরিবার মহিলার পরিবারের থেকে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল, উন্নত। কিন্তু তাঁর নিজস্ব কোনও ইনকাম বা রোজগার নেই। ফলে তিনি কিীভাবে খোরপোষের টাকা দেবেন? পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী নিজে রোজগার করেন। মাসিক ১২ হাজার টাকা পান। তিনি নিজের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিজেই নিতে পারেন। কিন্তু বিচারপতি অজয় মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, একজন শক্ত সমর্থ্য যুবক তিনি এইভাবে তাঁর আইনি দায়িত্ব বা কর্তব্য এড়িয়ে যেতে পারেন না। পাশাপাশি আদালত বেকার যুবক কিছু করেন না বলে ছেড়ে দিতে পারে না। ওই যুবকের মনে রাখা উচিত, স্ত্রীকে তাঁরা কার্যত রাস্তায় বের করে দিয়েছে। এখন স্ত্রী কিছু রোজগার করেন বলে, তিনি তাঁর স্ত্রীর প্রতি যে সামাজিক দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে তা অস্বীকার করতে পারেন না। সেই কারণে আদালত নির্দেশ দিচ্ছে, স্ত্রীকে প্রত্যেক মাসের ১০ তারিখ মাসিক চার হাজার টাকা করে খোরপোষ দিতে হবে। এতদিনের যা বকেয়া সেই টাকা ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বারোটি ইনস্টলমেন্টে (কিস্তিতে)মিটিয়ে দিতে হবে।
রিপোর্টারঃ মানস নস্কর