চাকরিহারাদের আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতির পর এবার আইনি পথে কড়া পদক্ষেপ নিল পুলিশ। বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনের সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনায় ১৭ জন শিক্ষককে তলব করেছে বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশ। অভিযোগ, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ভাঙচুর এবং সরকারি কর্তব্যে বাধা দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। আগামী ২১ মে সকাল ১১টায় থানায় হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। হাজিরা এড়ালে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর ৩৫(৬) ধারায় তাঁদের গ্রেফতার করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে নোটিশে।
গত বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনের সামনে চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের দাবি, নতুন করে পরীক্ষা নয়—পুরনো চাকরিই ফিরিয়ে দিতে হবে। এই দাবিতে বিক্ষোভকারীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। এক পর্যায়ে উত্তেজনা চরমে ওঠে, পুলিশ লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় বলে অভিযোগ। যদিও পরে পুলিশ তা স্বীকার করে।
পুলিশের বক্তব্য:
শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার জানান, 'পুলিশ প্রথম থেকেই সংযত ছিল। সাত ঘণ্টা আমরা অপেক্ষা করেছি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হলে পুলিশকে শেষ পর্যন্ত পদক্ষেপ করতেই হয়।' তাঁর সঙ্গে ছিলেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিমও।
পুলিশ জানায়, যে ১৭ জন শিক্ষককে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে চলমান তদন্তে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও সম্পত্তি ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
আন্দোলনকারীদের প্রতিক্রিয়া:
চাকরিহারাদের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করছেন। পুলিশের এই পদক্ষেপকে 'প্রশাসনিক চাপ' বলেও উল্লেখ করেন আন্দোলনের এক মুখপাত্র।
উল্লেখ্য, এর আগে এপ্রিল মাসেও রাজ্যজুড়ে ডিআই অফিস ঘেরাও কর্মসূচির সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। তখন কসবায় ডিআই অফিস ঘিরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, প্রকাশ্যে এক পুলিশ আধিকারিককে বিক্ষোভকারীকে লাথি মারতে দেখা গিয়েছিল, যা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে।
এই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবারের ঘটনায় পুলিশের তরফে আরও কড়া অবস্থান নেওয়া হচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে। আন্দোলনকারীদের একাংশের মতে, প্রশাসন আন্দোলন দমন করতে ভয় দেখানোর পথ নিয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা এখন আন্দোলনকারীদের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে। তবে পুলিশের তরফে এবার কোনওরকম শিথিলতার জায়গা নেই বলেই স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে।