
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সক্রিয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এদিন সকালে সবার প্রথমে কলকাতা পুরসভার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তর বাড়িতে সিবিআই হানার খবর সামনে আসে। তারপরেই জানা যায়, কেবল বাপ্পাদিত্যর বাড়িতে নয়, সিবিআই অভিযান চালাচ্ছে আরও একাধিক জায়গায়। যারমধ্যে রয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক অদিতি মুন্সীর স্বামী দেবরাজ চক্রবর্তীও।
বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তর পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের বিধাননগর পুরসভার কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তীর বাড়িতেও বৃহস্পতিবার সকালে হানা দেয় সিবিআই। দেবরাজ তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক অদিতি মুন্সীর স্বামী। আগেও তাঁকে একটি মামলায় তলব করেছিল সিবিআই। এদিন সকাল ৯টা ১০ মিনিটে রাজারহাটে দেবরাজ চক্রবর্তীর বাড়িতে পৌঁছয় সিবিআই। সিবিআই অফিসারদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও ছিলেন অভিযানে। সিবিআই যখন হানা দেয় দেবরাজ বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর বাড়ির সদস্যরা সে কথা সিবিআই গোয়েন্দাদের জানিয়ে দেন। তখন বাইরে তাঁরা অপেক্ষা করতে থাকেন। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধাননগরের কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তীর গাড়ি এসে পৌঁছয় বাড়ির সামনে। তখন দু’পক্ষের দেখা হয়। সিবিআই অফিসাররা তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যান।
এর আগে ‘ভোট-পরবর্তী হিংসা’ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অদিতি মুন্সীর স্বামী তথা তৃণমূল কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তীকে তলব করেছিল সিবিআই। দেবরাজ বর্তমানে বিধাননগরের তৃণমূল কাউন্সিলর এবং মেয়র পারিষদ। দীর্ঘ দিন ধরেই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত তিনি। এক সময় কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর আপ্তসহায়ক ছিলেন এই যুব নেতা। ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতিও। ২০১৩ সালে বিধাননগর পুরনিগম এলাকায় একটি উপনির্বাচন হয়েছিল। সূত্রের খবর, তাতে টিকিট চেয়ে পূর্ণেন্দুর কাছে দরবার করেছিলেন দেবরাজ। তৃণমূল তাঁকে তখন টিকিট দেয়নি। পরে ২০১৫ সালের নির্বাচনের সময়ে ফের ভোটে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন দেবরাজ। টিকিট না পেয়ে দল ছেড়ে দেন। ২০১৫ সাল থেকে বিধাননগর পুরসভার কাউন্সিলর দেবরাজ। সেই সময় তিনি তৃণমূল ছেড়ে সাময়িক ভাবে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য আবার তৃণমূলেই ফিরে আসেন।
শোনা যায়, বিধাননগরে ভোটে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে তৎকালীন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেনের সঙ্গে দেবরাজের বিবাদ চরমে উঠেছিল। জানা যায়, সেই বিবাদের জেরেই তৃণমূলের টিকিট পাননি তিনি। ২০১৫ সালে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের হাত ধরেন দেবরাজ। সেই সঙ্গে ছেড়ে দেন পূর্ণেন্দু বসুর আপ্তসহায়কের কাজও। বিধাননগর পুরনিগম এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। সেই সময়ে ভোটের দিন দেবরাজকে গ্রেফতার করেছিল বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। বন্দি অবস্থায় তাঁকে ভোটে লড়তে হয়েছিল। ভোটে জিতে বিধাননগরের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি। জামিনে মুক্ত হয়ে কাউন্সিলর হিসাবে শপথ নেন। সেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ণেন্দু বসুও। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই কংগ্রেস ছেড়ে ফের তৃণমূলে যোগ দেন দেবরাজ। রাজনৈতিক মহলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দেবরাজ। বিধাননগর তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূলের এক জন দাপুটে নেতা হিসাবেই তিনি পরিচিত। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিধাননগর পুরনিগমের ভোটে দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হয়ে মেয়র পারিষদ হন দেবরাজ। একুশের ভোটের পর ভোট-পরবর্তী হিংসা মামলার তদন্তে সিবিআইয়ের আতশকাচের নীচে ছিলেন দেবরাজ ।
কীর্তনশিল্পী অদিতি মুন্সীর সঙ্গে দেবরাজের বিয়ে হয় ২০১৮ সালে। স্বামী দেবরাজের হাত ধরেই ধীরে ধীরে রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন অদিতি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দমদমের সাংসদ সৌগত রায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। রাজারহাট গোপালপুর কেন্দ্র থেকে তাঁকে টিকিট দেয় তৃণমূল। ভোটে জিতে বিধায়কও হন অদিতি।