ভোট পরবর্তী হিংসার মামলা অন্য রাজ্যে সরানোর আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতিদের তোপের মুখে পড়তে হল সিবিআইকে। সিবিআইয়ের যুক্তি ছিল, ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কোর্টে জামিন পেয়ে যাচ্ছেন অভিযুক্তরা। তাই এই মামলা অন্য রাজ্যে সরানো হোক। কার্যত পশ্চিমবঙ্গের বিচারব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেয় সিবিআই। আর এতেই সুপ্রিম কোর্টের কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি। রীতিমতো তিরস্কারের মুখে মামলা তুলে নেন সিবিআইয়ের আইনজীবী এসভি রাজু।
সিবিআই-এর দাবি ছিল, পশ্চিমবঙ্গে বিচারপদ্ধতি প্রভাবিত হচ্ছে। তাই অভিযোগ তুলে অন্য রাজ্যে মামলা সরানোর আর্জি জানিয়েছিল সিবিআই। শুক্রবার বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জের বেঞ্চে ছিল মামলার শুনানি। সিবিআই-এর তরফে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজুকে তীব্র তিরস্কার করে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি ওকা সিবিআই-কে প্রশ্ন করেন, “আপনারা কীসের ভিত্তিতে এই আবেদন করছেন? আপনারা কী বলতে চান পশ্চিমবঙ্গের সব আদালতেই প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে? আপনারা বলতে চাইছেন, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন আদালতে বেআইনিভাবে জামিন মঞ্জুর করা হচ্ছে? পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক বিচারপদ্ধতিতে প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে?”
সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যে এটা পরিষ্কার সিবিআই-এর অফিসাররা কোনও বিচারককে পছন্দ নাই করতে পারেন তবে, একটা গোটা রাজ্যের সমগ্র বিচারপদ্ধতি কাজ করছে না, এটা বলা উচিত নয়। সিবিআই-এর এই মনোভাবকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি। শেষ পর্যন্ত ভুল স্বীকার করে মামলা তুলে নিতে বাধ্য হন অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু।
এদিন বিচারপতি ওকা সিবিআই-কে প্রশ্ন করেন, “আপনারা কীসের ভিত্তিতে এই আবেদন করছেন? আপনারা কী বলতে চান পশ্চিমবঙ্গের সব আদালতেই প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে? আপনারা বলতে চাইছেন, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন আদালতে বেআইনিভাবে জামিন মঞ্জুর করা হচ্ছে? পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক বিচারপদ্ধতিতে প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে?”
শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, যদি এই মামলা অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত করা হয়, তাহলে মেনে নেওয়া হবে যে পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক বিচারপদ্ধতিতে প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গের কোনও কোর্ট কাজ করছে না। সুপ্রিম কোর্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, সিবিআই-এর অফিসাররা কোনও বিচার বিভাগীয় আধিকারিক বা কোন একটি রাজ্যকে পছন্দ নাই করতে পারে, তাই বলে সমগ্র বিচারপদ্ধতি কাজ করছে না, এটা বলা উচিত নয়।
একুশের বিধানসভা ভোটে বড়সড় ব্যবধানে জয়ী হয় তৃণমূল(TMC)। তৃণমূল তৃতীয়বার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভোট পরবর্তী হিংসার একাধিক অভিযোগ ওঠে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অত্যাচারের অভিযোগ তুলে সরব হয় বিরোধীরা। মূলত বিজেপি। কলকাতা হাই কোর্টে একের পর এক মামলা দায়ের হয়। পরবর্তীতে কলকাতা হাই কোর্ট খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনার তদন্তভার দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে। দীর্ঘদিন ধরে চলছে সেই মামলা।
সিবিআইয়ের অভিযোগ, ২০২১ সালের ভোট পরবর্তী হিংসার ৪০ টি মামলার ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যা হচ্ছে। সাক্ষী ও আইনজীবীদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে। এই অভিযোগকে সামনে রেখেই ৪০ টি মামলা অন্য রাজ্যে সরানোর আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। সেই মামলায় শেষে সিবিআইকেই তিরস্কৃত হতে হল।