বাড়িতে হানা দিয়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি যুব তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা বিনয় মিশ্রকে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেও ফল হয়নি। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিলেও বিনয় মিশ্রের নাগাল পায়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাই গরু পাচারকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত ব্যবসায়ী বিনয় মিশ্রের বিরুদ্ধে এবার রেড কর্ণার নোটিস জারির পক্ষেই এগোচ্ছে সিবিআই। সেই কারণেই ব্যবসায়ী বিনয় মিশ্রের বিরুদ্ধে এবার ওপেন ওয়ারেন্ট নোটিস জারি করে দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি।
রেড কর্ণার নোটিস জারির আগের পদক্ষেপই হল ওপেন ওয়ারেন্ট নোটিস। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে গরু পাচারকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত বিনয়কে হাতে পেতে মরিয়া সিবিআই। এই নিয়ে ইন্টারপোলের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। এবার ইন্টারপোল থেকে সবুজ সঙ্কেত মিললেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওয়ারেন্টের কপি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ফলে বিদেশে গা ঢাকা দিতে বেগ পেতে হবে বিনয় মিশ্র ওরফে লালাকে।
আগেই ফেরর ঘোষণা করেছে আদলত
গত জানুয়ারিতে যুব তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা বিনয় মিশ্রের একাধিক আস্তানায় তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। রাসবিহারী এভিনিউ, লেকটাউন-সহ কলকাতার তিনটি আস্তানায় তল্লাশি চালায় সিবিআই। একাধিক জিনিসও বাজেয়াপ্ত করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। লুকআউট নোটিস জারির পরে বিনয়কে সমনও পাঠানো হয়েছিল। এরপরেই আসানসোলে সিবিআই-এর বিশেষ আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বিনয় মিশ্রের বিরুদ্ধে। এরপর ফেরার ঘোষণা করা হয় তাকে। তারপরেই বিনয় মিশ্রের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারর তৎপরতা শুরু করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হয় সিবিআই
সূত্রের খবর, কয়েকদিন আগেই রেড কর্নার নোটিস জারি করার জন্য ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, এই মুহূর্তে বিনয় দুবাইয়ে রয়েছে। এ বিষয় নিশ্চিত হওয়ার পরই সিবিআই আধিকারিকরা তাঁর বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারির পরিকল্পনা করেন। ইন্টারপোলের কাছে এই মর্মে আবেদন করা হয়েছে।
বিনয়ের সঙ্গে উপর মহলের যোগ?
তদন্তে সিবিআই আধিকারিকরা মনে করছেন, গরু পাচার ও কয়লা পাচার মামলার ‘কমন ফ্যাক্টর’ হল এই বিনয় মিশ্র। তাঁকে জেরা করলে দুই মামলার অনেক জট খুলতে পারে। এর আগে রাজ্যে গরু ও কয়লা পাচার তদন্তে নেমে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা। তাদের জেরা করেই অন্যান্যদের সূত্র মিলেছে। সেভাবেই পাওয়া গিয়েছিল ব্যবসায়ী বিনয় মিশ্রর নাম। তাঁর সন্ধানে নেমে গোয়েন্দারা রীতিমতো ধাঁধায় পড়েন। বারবার হাজিরার নোটিস দেওয়া সত্বেও সিবিআই দফতরে হাজির হননি। বরং বারবার গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিতে দেখা যায়। সেসময়ই গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন, ভিনরাজ্যে পালিয়েছে বিনয় মিশ্র। তাঁর অনুগামীদের মধ্যেও বেশ কয়েকজনের বাড়ি, অফিসে তল্লাশি চালানো হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বেশ কিছু নথি। তার ভিত্তিতেই বিনয়ের খোঁজ চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
বিনয় মিশ্রকে ধরতে পারলে গরু পাচারের পাশাপাশি কয়লা পাচার সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে, তার কাছ থেকে, এমনটাই মনে করছেন সিবিআই আধিকারিকরা। সিবিআই সূত্রের দাবি, বিনয় মিশ্রের কাছে তিনটি পাসপোর্ট রয়েছে। ভারত, বাংলাদেশের পাশাপাশি দুবাইয়ের পাসপোর্ট রয়েছে তার কাছে। সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছে, রুজিরা এবং মেনকার ক্ষেত্রেও বিনয় মিশ্রের যোগ তারা পেয়েছেন। বিনয়ের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সিবিআই-এর দাবি, বিদেশের অ্যাকাউন্টে যেমন টাকা দেওয়া হয়েছে, ঠিক তেমনই বিভিন্ন কোম্পানিতে টাকা ঢেলে কালো টাকাকে সাদা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে শুধু সিবিআই নয়, অপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির তরফেও বিনয় মিশ্রের বাড়িতে তল্লাশি চালান হয়। ইডির তরফে বিনয়ের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়ে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী আগেই দাবি করেছেন, বিনয় মিশ্রের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ ২০১৩ সাল থেকে। তার নিখোঁজ হওয়ার আগে পর্যন্ত ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার তরফে থেকে বিনয় মিশ্রের নিরাপত্তায় তিনজন কনস্টেবলকে নিয়োগ করা হয়েছিল বলেও জনসভায় দাবি করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। কনস্টেবলদের নামও জানিয়েছিলেন তিনি।