দশেরা-দীপাবলির আগে কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারিদের ডিএ (Dearness Allowance) বাড়িয়েছে। আবার ওই দিপাবলী উপলক্ষ্যে বোনাসও দেওয়া হচ্ছে রেলের কর্মীদের। কিন্তু, রাজ্যের কর্মীরা কি দিপাবলির আগে বকেয়া DA পাবেন? হাতে আসবে মোটা টাকা? রাজ্য সরকার কি কালীপুজোর আগেই কর্মীদের DA উপহার দেবে? একাধিক সরকারি কর্মচারি সংগঠনের যুক্তি, দীপাবলির আগেই ডিএ ঘোষণা করতে পারে রাজ্য সরকার। সেই সম্ভাবনা রয়েছে। আইনজীবীদের একাংশও একই কথা জানিয়েছেন।
কেন রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠন বা আইনজীবীদের একাংশ এই সম্ভাবনার কথা বলছেন? তাঁদের যুক্তি, গত ২১ মে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকারকে। সময়সীমা দিয়েছিল ৩ মাস। কিন্তু রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে রাজ্য। তবে রায় বহাল রাখে মহামান্য হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। অর্থাৎ ডিএ দিতেই হবে রাজ্যকে, সেই নির্দেশ দেওয়া হয় আদালতের তরফে ।
এদিকে মহামান্য হাইকোর্ট ডিএ মামলায় রাজ্যের আবেদন খারিজ করার পর মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং অর্থসচিব মনোজ পন্থের কাছে হলফনামা তলব করেছে। কারণ, আদালত অবমাননার মামলা করেছে ডিএ-র মামলাকারীরা। ৪ নভেম্বরের মধ্যে মহামান্য হাইকোর্টের কাছে এই হলফনামা জমা দিতে হবে রাজ্যকে।
আরও পড়ুন : Da Latest News Diwali Bonous : DA-র পর এবার বোনাস ঘোষণা কেন্দ্রের, সরকারি কর্মীরা মালামাল
সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির মতে, এই ৪ নভেম্বর খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রথমত এই তারিখের আগেই সরকার ডিএ ঘোষণা করে দিতে পারে। অথবা সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে। যদি সুপ্রিম কোর্টে যায় তাহলে সেখানে মামলা চলবে। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টে যদি না যায়, যদি ৪ তারিখে হাইকোর্টেই হলফনামা জমা দেয় তাহলে সরকারকে কিন্তু একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।
আইনজীবীদের একাংশের মতে, সেদিন যে হলফনামা রাজ্যকে জমা দিতে হবে সেখানে তাদের উল্লেখ করতে হবে কেন মহামান্য আদালতের নির্দেশের পরও রাজ্য বকেয়া ডিএ মেটায়নি। প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে কি সরকার ডিএ দিতে অক্ষম বা আদালত আবমাননার দায়ে কেন চিফ সেক্রেটারি ও ফিনান্স সেক্রেটারির বেতন বন্ধ করা হবে না ? আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, সরকার মহামান্য হাইকোর্টের এই প্রশ্নের মুখে পড়তে চাইবে না। তাই তারা সুপ্রিম কোর্টেই যেতে পারে।
এই বিষয়ে কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ়ের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় জানালেন, ৪ তারিখের আগে ডিএ ঘোষণা করতেই পারে রাজ্য সরকার। কারণ, সরকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তারা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সময় চাইতেই পারে। কিন্তু শেষ রক্ষে হবে না। আজ না হলেও কাল রাজ্য সরকারকে ডিএ দিতেই হবে। তাই কালীপুজোর আগে কর্মীরা ডিএ নিয়ে সুখবর পেতে পারেন।
তাঁর আরও সংযোজন, 'Da দেওয়ার সদিচ্ছা রাজ্য সরকারের আছে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে প্রথম থেকেই। কিন্তু, সরকার যদি মনে করে তারা মহামান্য হাইকোর্টের কাছে ৪ তারিখের হলফনামা পেশ করে অপদস্থ হবে না, তাহলে সরকারি কর্মীদের পক্ষে রাজ্য সিদ্ধান্ত নিতেই পারে।'
আরও পড়ুন : DA Latest Updates: ডিএ-র ফারাক বেড়ে ৩৫ শতাংশ, মাসে কত টাকা কম পাচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা?
সরকারি কর্মচারি পরিষদও একই আশা করছে। তাদের তরফে দেবাশিস শীল জানালেন, এখন সুপ্রিম কোর্ট খোলা। কিছুদিন বন্ধ হবে। 'এই মাসের ২৮ তারিখের পর ফের খুলবে। তখনও রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতে যেতেই পারে। কিন্তু তাতেও সরকারের তেমন লাভ হবে না। তাই এই যে ৪ তারিখ আসছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আদালত অবমাননার মামলায় রাজ্যকে হলফনামা চেয়েছে মহামান্য হাইকোর্ট। ২০০৯ থেকে ২০১৫ - এই সময়কালের যে এরিয়ার বাকি আছে সেটাও যদি সরকার ইনস্টলমেন্টে কর্মীদের দেয় তাহলে আর আদালত অবমাননা হবে না। ডিএ-এরিয়ার বাবদ ১ লাখ কোটিরও বেশি টাকা বকেয়া রয়েছে। এখন থেকে সরকার যদি তা না করে সেই বকেয়ার পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকবে। সেক্ষেত্রে বিপদে পড়বে সরকারই।'
তবে সরকার সুপ্রিম কোর্টে যায়। সেক্ষেত্রে কী হবে? সরকারি কর্মচারি পরিষদ ও কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ এই দুই সংগঠনই এখনও পর্যন্ত চারটে ক্যাভিয়েট ফাইল করে রেখেছে। অর্থাৎ সরকার যদি যায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে যায়, তাহলে মামলায় পক্ষ হিসেবে ক্যাভিয়েট ফাইলকারী সংগঠনগুলোকে পক্ষ করতেই হবে। তখন আইনি লড়াই চলবে। আইনজীবীদের একাংশের মতে, 'রাজ্য সরকার বারবার বকেয়া ডিএ দেওয়া থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট সরকারের আবেদন খারিজও করেছে। তাই সুপ্রিম কোর্টে গেলেও সরকার সেভাবে হয়তো লাভ করতে পারবে না। তাই দীপাবলির আগে ডিএ ঘোষণা করে চমক দিতেই পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।'