মহার্ঘভাতা নিয়ে যতখানি জোরাল আওয়াজ উঠেছে, ঠিক ততটা জোরেই প্রশ্নও উঠেছে৷ রাজ্য সরকার কি মহার্ঘভাতা বা ডিয়ারনেস অ্যালাওয়্যান্স দিতে বাধ্য? নাকি বাধ্য নয়? রাজ্য রাজনীতি এখন এই প্রশ্ন আর তার উত্তর নিয়ে উত্তাল৷ প্রশ্ন উঠছে, ডিএ সরকারি কর্মচারীদের অধিকার , নাকি এটা সরকারের দেওয়া নেহাতই অনুদান। আর এর মাঝেই এসে গিয়েছে বহু প্রতীক্ষিত দিন। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার, ২১ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানি হতে চলেছে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা আত্মবিশ্বাসী, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়ের করা ‘স্পেশাল লিভ পিটিশন’ খারিজ করে দেবে শীর্ষ আদালত। মহার্ঘ ভাতা (ডিয়ারনেস অ্যালোওয়েন্স বা ডিএ) মামলায় জয় হবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের।
সুপ্রিম কোর্টে মহার্ঘ ভাতা তথা ডিএ মামলার শুনানি হবে বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে। কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতার দাবিতে প্রায় চার মাস আগে সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন দায়ের করেছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠন। তার পর থেকে বিভিন্ন কারণে মামলা পিছিয়েছে। বদল হয়েছে বিচারপতিও। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আবেদন মেনে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দেয় কি না তার দিকেই এখন নজর সকলের।
বকেয়া ডিএর দাবিতে ৫৪ দিনে পড়ল শহিদ মিনার চত্বরে রাজ্য সরকারি কর্মীদের অবস্থান আন্দোলন। ৪০ দিনে পড়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অনশন কর্মসূচি। এই প্রেক্ষাপটেই আজ ডিএ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দেয় সেই দিকেই চেয়ে রয়েছে হাজার হাজার রাজ্য সরকারি কর্মচারী । আইনজীবীদের দাবি, এই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একজন বিচারপতি বদল হলেও ডিভিশন বেঞ্চের লিডিং জাজ মামলায় থাকবেন। এক্ষেত্রে মাননীয় বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী থাকছেন। সেই কারণে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো মঙ্গলবারই এই মামলার চূড়ান্ত ফয়সলা হতে পারে।
বকেয়া ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের টাগ অফ অয়্যার বহুদিনের। এই মামলায় হলফনামা জমা দিয়েছে সবপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো শর্টনোটও জমা পড়েছে। তাই রায়দান হওয়ার পথে কোনও বাধা নাও আসতে পারে। তবে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত জানাবেন মাননীয় বিচারপতিরা। মঙ্গলবারের এই মামলার দিকেই তাকিয়ে রাজ্যের লাখ লাখ সরকারি কর্মী। মামলাকারী সংগঠন ও সরকারি কর্মীদের দাবি মঙ্গলবারই মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় রাজ্য সরকারের দায়ের করা এসএলপি-ও খারিজ করে মামলা ডিসমিস করে দেবে বলেও মনে করছেন সরকারি কর্মীরা।
রাজ্য বাজেটে ৩ শতাংশ ডিও বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেও, ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ-এর ফারাক ৩২ শতাংশ। মুখ্যমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন, আপাতত আর DA বাড়ানো যাবে না । এর আগে পঞ্চম বেতন কমিশনের আওতায় বকেয়া ডিএ-এর দাবিতে SAT ও হাইকোর্টে হেরেছে রাজ্য সরকার। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে SLP জমা করেছে রাজ্য। গত ১৫ মার্চ এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টের তরফে সার্কুলার জারি করা হয়। সেখানে জানানো হয় ১৫ ও ১৬ মার্চ অন্যান্য বাকি থাকা মামলার শুনানি হবে দেশের শীর্ষ আদালতে। সেইসব মামলা শোনার শেষে ডিএ মামলার শুনানি হবে। এর আগে গত জানুয়ারিতেও মহার্ঘ ভাতা মামলার শুনানি পিছিয়ে যায় সুপ্রিম কোর্টে। সে সময় অবশ্য শোনা যায়, এই মামলায় রাজ্যের তরফে যে আবেদন করা হয়েছিল তাতে ত্রুটি ছিল। সেই কারণে শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়। সেই ত্রুটি সংশোধন করে রাজ্যকে ফের একবার আবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশও দেয় আদালত। সে সময় ১৫ মার্চের শুনানির দিন স্থির হয়। তবে সেই শুনানি হয়নি। আজ সুপ্রিম কোর্টের ছয় নম্বর আদালতকক্ষে বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে ডিএ মামলার শুনানি হবে। শীর্ষ আদালতের প্রকাশিত কজলিস্ট অনুযায়ী, ৫৩ নম্বরে নথিভুক্ত আছে ডিএ মামলা। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আজ মহার্ঘ ভাতা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে চলেছে।