ঠাণ্ডা পড়লেও কমেনি ডেঙ্গির (Dengue) প্রকোপ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, শুধু গরম বা বর্ষায় নয়, ডেঙ্গি বছরভর চিন্তায় ফেলছে। বৃহস্পতিবার, রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বাংলায় ৬২ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। ৮ নভেম্বর সারা বাংলা জুড়ে ৯৩২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরীক্ষা করা হয়েছিল ৬,১১৪ জনকে।
কলকাতায় এখনও বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ডেঙ্গির রোগী ভর্তি রয়েছেন। যদিও সংখ্যা কমে এসেছে। বৃহস্পতিবারের কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে এক ডিগ্রি বেশি। কয়েক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি হয়নি কলকাতায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ডেঙ্গি কমছে না।
দিল্লির জাতীয় ভেক্টর বার্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের এক বিশেষজ্ঞ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জমে থাকা বৃষ্টির জল ছাড়াও এডিস ইজিপ্টি মশা ডিম পাড়তে পারে। কলকাতার মতো শহুরে এলাকায়, এমন কিছু নির্মাণ সাইট রয়েছে যেখানে মিষ্টি জল জমে। ওগুলোই মশার প্রজননের জায়গা। বছরের এই সময়ে ডেঙ্গির প্রকোপে বোঝা যাচ্ছে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। ডেঙ্গি প্রতিরোধে একটি বছরব্যাপী ভেক্টর-নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রয়োজন।
আরএন টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সেস হাসপাতালে বৃহস্পতিবার চারজন ডেঙ্গি রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালনাকারী নারায়না হেলথের পূর্ব ও দক্ষিণের সিওও আর ভেঙ্কটেশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এক মাস আগে ২০ জন ডেঙ্গি রোগী ভর্তি ছিলেন।
আরও পড়ুন : ভাটপাড়ার ভাইস চেয়ারম্যান ৮ পাস? আইনজীবীকেই জরিমানা হাইকোর্টের
রুবি জেনারেল হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দুজন ডেঙ্গু রোগী ছিল বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার শুভাশীষ দত্ত।
এএমআরআই হাসপাতালের সল্টলেক, মুকুন্দপুর এবং ঢাকুরিয়ার তিনটি ইউনিটে পাঁচজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল। শেষ রোগীকে তিন দিন আগে ভর্তি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন গ্রুপের এক কর্মকর্তা।
এক মাসেরও বেশি সময় আগে, AMRI-এর তিনটি ইউনিটে প্রায় ৭০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিলেন।
পিয়ারলেস হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চন্দ্রমৌলি ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বয়স্ক রোগীদের মাঝে মাঝে দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয় কারণ প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়তে সময় লাগে। বৃহস্পতিবার এই হাসপাতালে ৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, তরুণ রোগীদের ক্ষেত্রে, প্লেটলেট কাউন্ট সর্বনিম্ন বিন্দুতে পৌঁছানোর পরে একদিনে উন্নতি হতে শুরু করে। কিন্তু বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে প্লেটলেট কাউন্ট বাড়তে শুরু করার আগে তিন থেকে চার দিনের জন্য সর্বনিম্ন বিন্দু স্পর্শ করার পরেও একই স্তরে থাকে।
কিন্তু কলকাতায় শীত পড়ে গেলেও ডেঙ্গি আক্রান্তের ঘটনা অব্যহত রয়েছে। সাধারণত ঠাণ্ডা পড়ে গেলে ডেঙ্গির প্রোকোপ না থাকার কথা, এমনটাই জানান পতঙ্গবিদরা। কিন্ত এবছর তার ব্যতিক্রম হচ্ছে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডেঙ্গির বিরুদ্ধে লড়াই শুধু বর্ষা বা তার পরের মাসগুলিতেই নয়, সারাবছরই চালিয়ে যাওয়া উচিত।
আরও পড়ুন : আজ কালিম্পংয়ের চেয়ে বেশি ঠান্ডা পানাগড়ে, আপনার শহরে কত? রইল