
'দর্শনার্থীদের জানানো হচ্ছে, দেশপ্রিয় পার্কের পুজো মণ্ডপ বন্ধ রয়েছে...।' কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে চতুর্থীর রাতে এই বার্তা পেয়ে শোরগোল পড়ে যায়। ২০১৫ সালে 'সবচেয়ে বড় দুর্গা' দেখার হিড়িকে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মণ্ডপ, ফলে ফের ১০ বছর পর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল না তো? আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে দর্শনার্থীদের মধ্যে। অনেকেই শুক্রবার রাতে প্যান্ডেলের বাইরে ভিড় করেন, কিন্তু ভিতরে ঢুকতে পারেননি। ঠিক কী হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার জনপ্রিয় এই পুজো মণ্ডপে?
দেশপ্রিয় পার্কের পুজো মণ্ডপ বন্ধ?
চতুর্থী অর্থাৎ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিধায়ক দেবাশিস কুমারের হাত ধরে উদ্বোধন হয় দেশপ্রিয় পার্কের পুজো মণ্ডপ। এরপরই জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার কথা ছিল প্যান্ডেল। তবে তা হয়নি। পার্কের বাইরে দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন চোখে পড়লেও ভিতরে তখনও ছিল নৌ এন্ট্রি। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি পোস্ট করা হয়, 'জনসাধারণের অবগতির জন্য জানানো হচ্ছে, দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গাপুজো প্যান্ডেল আজ দর্শনার্থীদের জবন্য বন্ধ রয়েছে।' বার্তা চাউর হতেই কেউ কেউ হতাশ হয়ে ফিরে যান। কারও কারও মনে আবার আশঙ্কা তৈরি হয়, তবে কি ফের বন্ধ করে দেওয়া হল এই মণ্ডপ?
চতুর্থীর রাত যত বাড়তে থাকে জনতার ভিড় ততই দেশপ্রিয় পার্কের সামনে উপচে পড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ দক্ষিণ কলকাতার ঐতিহ্যবাহী এই মণ্ডপ দর্শনে জড়ো হয়েছিল। কিন্তু কলকাতা পুলিশের তখনও বার্তা ছিল, 'সাধারণ মানুষের অবগতির জন্য জানানো হচ্ছে, দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গাপুজো প্যান্ডেল দর্শনার্থীদের জন্য এখনও খোলা হয়নি।' এতে বিভ্রান্তি আরও বাড়তে থাকে। অনেকেই মনে করেন, তবে কি এবার চতুর্থীতেই বন্ধ হল দেশপ্রিয়র দ্বার? ফেসবুকেও অনেকে এই নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেন।
ঠিক কী হয়েছিল?
উল্লেখ্য, গত দু'দিন আগের প্রবল বৃষ্টিতে কলকাতার অন্যান্য অংশের মতো জলমগ্ন হয়েছিল দেশপ্রিয় পার্ক চত্বরও। প্যান্ডেলের আশপাশের রাস্তায় হাঁটুসমান জল জমে গিয়েছিল। পরবর্তীতে জল নেমে গেলেও মাঠ ভেজা থাকে। ফলত, শেষ মুহূর্তের প্যান্ডেল কাজ সারতে বেশ কিছুটা দেরি হয়েছে। উদ্বোধনও দু'দিন পিছিয়ে দেওয়া হয় এই মণ্ডপে। অবশেষে চতুর্থীর সন্ধ্যায় উদ্বোধন হলেও মাঠের নানা অংশে কাদা ছিল। পড়েছিল বালি, পেরেক সহ আবর্জনাও। মাটির একটি অংশ ভেজা থাকার কারণে কিছুটা বসেও যায়। এই পরিস্থিতিতে দর্শনার্থীদের ভিড় প্যান্ডেলের মূল অংশে ঢুকতে শুরু করলে বিপত্তি বাঁধতে পারত, তাই প্যান্ডেল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কী বলছে উদ্যোক্তারা?
ক্লাবের সেক্রেটারি সুদীপ্ত কুমার বলেন, 'তেমন কিছুই হয়নি। তবে মাঠের কিছু অংশে কাদা, বালি এসব ছিল। ফলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় যত ক্ষণ না পর্যন্ত সেগুলো সরিয়ে ফেলা হচ্ছে তত ক্ষণ যেন দর্শনার্থীদের প্রবেশ না করানো হয়। সে কারণে আমরা দ্রুত সেগুলি সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করি। উদ্বোধনের পরেই মণ্ডপ জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু ওইগুলো সরানোর জন্য কিছু ক্ষণ বন্ধ রাখা হয় মণ্ডপ। রাত ১১টার পর ফের খুলে দেওয়া হয় দর্শনার্থীদের জন্য। রাতেও মানুষ এসেছেন প্যান্ডেলে। এখন সম্পূর্ণ ভাবে মণ্ডপ খওলা রয়েছে। দর্শনার্থীরাও আসছেন।' তিনি আরও বলেন, 'সোশ্যাল মিডিয়ায় তো কিছু হলেই নানা কথা ছড়িয়ে পড়ে। তবে কোনও সমস্যা নেই, সাধারণ মানুষের জন্য প্যান্ডেল খোলা।' পুলিশের পক্ষ থেকেও রাতে জানানো হয়, 'দেশপ্রিয় পার্কের পুজো মণ্ডপ এখন খুলে দেওয়া হয়েছে।'
সবচেয়ে বড়...
১০ বছর আগে সবচেয়ে বড় দুর্গা প্রতিমা দেখতে দেশপ্রিয় পার্কে উপচে পড়েছিল জনতার ভিড়। ফলস্বরূপ পঞ্চমীর দুপুরেই পদপিষ্ট পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং ঝাঁপ বন্ধ হয় মণ্ডপের। ১০ বছর পর, ৮৮তম বর্ষে এবারও দেশপ্রিয় পার্কের প্যান্ডেলের সঙ্গে 'সবচেয়ে বড়' শব্দটি জুড়ে গিয়েছে। তবে এবার বড় দুর্গা নয়, রয়েছে বড় মণ্ডপ। ৮৮ ফুট উঁচু প্যান্ডেল তৈরি হয়েছে। যেটির নৌকার আকৃতিতে গড়া। ফলে নজর কাড়ছে দেশপ্রিয় পার্ক। তাই এবারে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দেশপ্রিয় পার্ক এলাকায় পুজোর সময়ে মোতায়েন রয়েছে প্রায় ৭০০ পুলিশ কর্মী। প্যান্ডেলের ভিতরও রয়েছেন দুই পুলিশ কর্তা।