ছাব্বিশের ভোটের আগে তৃণমূলের শেষ একুশে জুলাই। কার্যত এই দিন থেকেই বিধানসভা নির্বাচনের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করে দিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন হাইভোল্টেজ কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন দলের ছোট-বড় সব নেতাই। কিন্তু এসবের মধ্যে সোমবারের কর্মসূচিতে যেন 'মিস্টার ইন্ডিয়া' হয়ে রইলেন অনুব্রত মণ্ডল। রবিবার বিকেলে ধর্মতলার সভাস্থলে বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলের দেখা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সোমবারের কর্মসূচিতে তিনি আদৌও উপস্থিত ছিলেন? দলের অন্দরে তা নিয়েই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।
বীরভূম তথা রাজ্য রাজনীতিতে অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখের ‘সুসম্পর্ক’ সর্বজনবিদিত। এমনকি এই সংঘাত থামাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হয় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। সোমবার তৃণমূলের শহিদ স্মরণ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সেই কাজল শেখ।তবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বড় অংশই বলছেন, তাঁরা কোথাও অনুব্রতকে দেখেননি, না মঞ্চে, না দর্শকাসনে, না মঞ্চের পিছনে। একই দাবি করেছেন কাজল শেখও। যদিও অনুব্রতর নিজের দাবি,‘আমি সভায় গিয়েছিলাম। গগন (সরকার) আর নারায়ণের (হালদার) সঙ্গে মিছিল করে গিয়েছিলাম। প্রথম দিকে মঞ্চেও উঠেছিলাম। তবে খুব গরম লাগছিল বলে তাড়াতাড়ি নীচে নেমে এসে মঞ্চের পিছনের দিকের একটা অস্থায়ী শিবিরে পাখার নীচে বসেছিলাম।’
এদিকে সোমবার কলকাতায় মিছিল করেন বীরভূমের শিক্ষা সেলের নেতা প্রলয় নায়েক, যিনি বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রতর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। তিনি কলকাতার মিছিলের একটি ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সেখানেও দেখা যায়নি অনুব্রতকে। প্রসঙ্গত, রবিবার ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ দিবসের সভাস্থলে মূল মঞ্চে যাওয়ার পথে অনুব্রতকে আটকে দেয় পুলিশ। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সেখান থেকে চলে যান তৃণমূলের বীরভূমের প্রাক্তন জেলা সভাপতি। অনুব্রতর চলে যাওয়ার প্রায় ঘণ্টাখানেক পর সভাস্থলে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেদিন দেখা হয়নি অনুব্রতর। এই পরিস্থিতিতে কেউ কেউ মনে করছেন, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা না করতে পেরে আগের দিনই অপমানবোধ করেছিলেন কেষ্ট। আবার কেউ বলছেন, রাজনীতিতে নিজের জায়গা হারিয়ে অনুব্রত নিজেই নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন।
গরু পাচার মামলায় তাঁকে সিবিআই গ্রেফতার করার পর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়লা ও গরুপাচারকাণ্ডে ইডি - সিবিআই যখন অনুব্রতকে নিয়ে টানাটানি করছে তখন তাঁর জেলযাত্রা রুখতে চেষ্টার কসুর করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুব্রত মণ্ডলকে সম্প্রতি বোলপুরের আইসির মা-বোন তুলে কুৎসিত ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা গেছে। যার জেরে তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলে দল। এরআগে গত মে মাসে বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি পদ থেকে সরানো হয় অনুব্রত মণ্ডলকে। শুধু তা-ই নয়, ওই জেলায় জেলা সভাপতি পদই আর রাখেনি শাসকদল। তা তুলে দেওয়া হয়।