
বাঙালির মুকুটে নতুন পালক, আমাদের একান্ত আপন দুর্গাপুজো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ইউনেস্কোর (UNESCO) হেরিটেজ তকমা পেয়েছে দুর্গাপুজো । ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশনের তরফে গতবছর ডিসেম্বরেই তাদের রিপ্রেজেন্টেটিভ লিস্ট অফ ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজের তালিকায় স্থান দিয়েছে এই রাজ্যের সব থেকে বড় উৎসবকে। গত শনিবার দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে সেই স্বীকৃতির শংসাপত্র কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রকের আধিকারিকের হাতে তুলে দেয় ইউনেস্কো। ফলে পুজো শুরুর এক মাস আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে কলকাতার মুকুটে যুক্ত হল নতুন পালক। এই স্বীকৃতির জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এদিন ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। দুর্গাপুজোর এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে গর্বের, তবে এই প্রথম নয় এর আগে পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী ছৌ নৃত্যকেও স্বীকৃত দিয়েছিল ইউনেস্কো।
বর্তমানে ভারতের ১৪টি সংস্কৃতি পেয়েছে হেরিটেজের তকমা
গত বছরের ১৩ থেকে ১৮ ডিসেম্বর, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বসেছিল UNESCO-র ইন্টারগভর্নমেন্ট কমিটির ১৬তম অধিবেশন। সেই অধিবেশনেই ‘কলকাতার দুর্গাপুজো’-কে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ তালিকায় যুক্ত করে রাষ্ট্রসংঘের এই শাখা সংগঠন। তবে গত বছরই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৭-য় কুম্ভ মেলাকে হেরিটেজের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। উৎসবের নিরিখে কুম্ভ মেলার পর কলকাতার দুর্গাপুজোই ইউনেস্কোর-র কাছে পেল হেরিটেজের তকমা। এরআগে ২০১০ সালে বাংলা ও ওড়িশার ছৌ নৃত্য পেয়েছিল হেরিটেজ তকমা। সেইসঙ্গে কালবেলিয়া এবং মুদিয়েত্তুকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেস্কো। ২০১৩ সালে মনিপুরের সংকীর্তনকে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। ২০১৪ সালে পঞ্জাবের পিতল ও তামার কারুকাজকে স্বীকৃতি সম্মান জানিয়েছিল ইউনেস্কো। ২০১৬-তে ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছিল যোগা। আর ২০১৭ সালে কুম্ভ মেলা এই তালিকায় যুক্ত হয়। আর গত বছরই কলকাতার দুর্গা পুজোকে হেরিটেজ তকমা দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, UNESCO-র আধিকারিকরা চলতি মাসেই আসবেন বাংলায়। এখানে থেকে দুর্গাপুজো উপভোগ করবেন তাঁরা।
ভারতের অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকা
এবার গরবাকে মনোনীত করেছে ভারত সরকার
গুজরাতের লোকনৃত্য গরবাকে ইউনেস্কোর ‘অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে’র (UNESCO Intangible Heritage Tag) তালিকাভুক্ত করতে মনোনীত করেছে ভারত সরকার ৷ ইউনেস্কোর অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিভাগের সচিব টিম কার্টিস গত ডিসেম্বরে কলকাতার জাদুঘরে একটি অনুষ্ঠানে এসে এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছিলেন ৷ যেখানে বাংলার দুর্গোৎসবকে ইউনেস্কোর ‘মানবতার অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ সম্মান দেওয়া হয় ৷ এবার সেই তালিকায় গুজরাতের গরবাকেও (Garba of Gujarat) যুক্ত করতে তৎপর হয়েছে ভারত সরকার ৷ তবে, এ নিয়ে ইউনেস্কোর অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিভাগের সচিব টিম কার্টিস জানিয়েছেন, এখনই গরবা বা অন্য কোনও লোকসংস্কৃতিকে এই তালিকায় নিয়ে আসা হচ্ছে না ৷ সম্প্রতি যে সাংস্কৃতিক প্রথা এবং লোকসংস্কৃতিকে মনোনীত করা হয়েছে, সেগুলিকে আগামী বছর বিবেচনা করা হবে ৷ তিনি জানান, ইউনেস্কোর অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংক্রান্ত যে এভিলিউশন বডি রয়েছে, তারা ২০২৩ সালে মাঝামাঝি সময়ে এ নিয়ে বিচার বিবেচনা করবে এবং ওই বছরের শেষে সেই কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করবে ৷ এই উৎসবে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সমানভাবে যোগদান, দুর্গাপুজোকে বিশ্ব মঞ্চে এই সম্মান পেতে সাহায্য করেছে ৷ এবার সেই তালিকায় যোগ হতে পারে গুজরাতের অতিপ্রাচীন লোকনৃত্য গরবা ৷ যার সঙ্গে দেবী দুর্গার আরেক রূপ দেবী অম্বার যোগ রয়েছে ৷