মেসির চারপাশে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো-ভাইঝিরা যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে লিওনেল মেসির উপস্থিতিকে ঘিরে ঘটে যাওয়া ভাঙচুরের ঘটনার তদন্তে রাজ্য সরকার তৎপর। মঙ্গলবারই এই ঘটনার তদন্তের জন্য চার সদস্যের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। সিটে রয়েছেন রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা পীযূষ পাণ্ডে, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম, এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার এবং ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলীধর। বুধবার সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ তদন্তকারী দল ফের যুবভারতী স্টেডিয়ামে পৌঁছে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে তারা স্টেডিয়াম লাগোয়া বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অফিসে যান এবং কিছুক্ষণ সেখানেই আলোচনা করেন।
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে আরও অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। তদন্তে উঠে এসেছে আয়োজকদের একাধিক গাফিলতির বিষয়। সূত্রের খবর, ইভেন্টের প্রায় তিন সপ্তাহ আগে আয়োজকরা একটি বড় ও অভিজ্ঞ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়। ওই সংস্থার শুধুমাত্র বিনোদনমূলক ছোটখাটো অনুষ্ঠান পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল, হাইভোল্টেজ আন্তর্জাতিক ইভেন্ট সামলানোর কোনও নজির ছিল না। কিন্তু দেশের বাকি জায়গাগুলিতে শতদ্রুর ঠিক করা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাই দায়িত্বে ছিল।
মেসির অনুষ্ঠানের সূচিতেও বদল আসে বলে অভিযোগ। প্রথমে মূল উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত bangla.aajtak.in-কে জানিয়েছিলেন, মেসি এসে উঠবেন তাজবেঙ্গল হোটেলে। কিন্তু তাঁকে নিয়ে তোলা হয় হায়াত রিজেন্সিতে। ]
তদন্তে আরও জানা গেছে, কলকাতায় আগের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল হওয়ার পর উপস্থাপককেও সরিয়ে দেওয়া হয়। নতুন উপস্থাপক নেওয়া হয়। মাঠে গোলমাল শুরু হলে আয়োজক শতদ্রু দত্ত নিজেই মাইক হাতে নিয়ে ঘোষণা করেন। পাশাপাশি, স্টেডিয়ামের ভেতরে জলের বোতল পাচার এবং আয়োজকদের তরফে সেগুলি বিক্রির বিষয়টিও সিটের তদন্তের আওতায় এসেছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার যুবভারতী স্টেডিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফুটবল মহাতারকা লিওনেল মেসির উপস্থিতি ঘিরে উন্মাদনা চরমে ওঠে। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে মাত্র ২৩ মিনিটের মধ্যেই মাঠ ছাড়তে হয় মেসিকে। অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রীদের অতিরিক্ত ভিড়ের জেরে সাধারণ দর্শকরা মেসিকে ঠিকমতো দেখতে পাননি। হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে এসেও বহু দর্শক হতাশ হয়ে ফেরেন।
এই ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ দর্শকদের একাংশ স্টেডিয়ামের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর চালায়। ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম কুমার রায়ের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির সুপারিশে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে শোকজ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শোকজ নোটিস পেয়েছেন বিধাননগর পুলিশ কমিশনার মুকেশ কুমার এবং যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দফতরের সচিব রাজেশ কুমার সিনহা। দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে বিধাননগরের ডেপুটি কমিশনার অনীশ সরকারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সিইও দেবকুমার নন্দনকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।