যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় গোটা রাজ্য। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যাদবপুরের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামো নিয়ে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। যাদের মধ্যে প্রথম গ্রেফতার হয় সৌরভ চৌধুরী, যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পড়ুয়া। তবে শুধু সৌরভ নয়, তার মতো এরকম বহু প্রাক্তনীরাই যাদবপুরের হস্টেলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ এই বিষয়ে নিরুত্তর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মৃত ছাত্রের বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডু পুলিশকে জানিয়েছিলেন যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ। ২০২২ সালে সে এমএসসি পাশ করেছে। সৌরভ বিশ্বিদ্যালয়ের মেইন হস্টেলেই থাকত। স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর থেকেই যাদবপুর নিয়ে যে সব বিষয়গুলি উঠে আসছে নতুন করে তার মধ্যে সিসি ক্যামেরা বসানো, বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে অবাধে প্রবেশ, অনৈতিক কাজকর্ম যেমন রয়েছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে প্রাক্তন পড়ুয়াদের জোরদার প্রভাবের কথাও শোনা যাচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক পড়ুয়া ও অন্যান্য প্রাক্তন পড়ুয়াদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন পড়ুয়াদের রাজ বহু বছর থেকেই চলছে। আর এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও নীরব।
এ প্রসঙ্গে bangla.aajtak.in-কে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, 'প্রাক্তনীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকা এটা বন্ধ করার আমি চেষ্টা করেছিলাম। আমি নিজে হস্টেল ভিজিট করতাম, মাসে ২-৩ বার এবং যাঁরা হস্টেলের আবাসিক নয়, তাদের চিহ্নিত করে বলতাম যে তোমরা থেকো না চলে যাও। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমি বাধ্য করতাম তাদের হস্টেল ছাড়তে। প্রাক্তন উপাচার্যের মতে, এই জিনিসটাই করতে হবে কর্তৃপক্ষকে এবং অন্যান্য আধিকারিক যাঁরা আছেন, তাঁদের হস্টেলে নিয়মিত ভিজিট করতে হবে, হস্টেলের আবাসিক যারা নয় তাদের চিহ্নিত করে বের করে দিতে হবে। গাফিলতি করলে হবে না।'
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তনদের এত জোরালো প্রভাব কেন? এ প্রসঙ্গে অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, 'যেহেতু কোনও চেকিং নেই সেই জন্য এই বাড় বাড়ন্ত প্রাক্তন পড়ুযাদের। যারা হস্টেলে রয়েছে তারাই আশ্রয় দেয় এই প্রাক্তনদের। এর পিছনে রাজনীতিও রয়েছে। যে সব প্রাক্তনীরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত তারা যদি থাকে তবে নতুন যারা আসছে, সেই জুনিয়রদের ব্রেন ওয়াশ করা অনেক সহজ হয়। যার জন্য তারা সেখানে থাকে।' এর পাশাপাশি তিনি এও বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অত্যন্ত কড়াভাবে পদক্ষেপ করতে হবে। সমূলে উৎপাটিত করতে হবে এই প্রাক্তনদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তনীদের থাকা, ঢোকা বন্ধ করতে হবে। নইলে কিন্তু এটার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।'
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করলেন প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। একইসঙ্গে 'হোক কলরব' খ্যাত উপাচার্যের অভিযোগ, পড়ুয়াদের ভালো রাখতে ও ক্যাম্পাসের সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় নেওয়া সমস্ত পদক্ষেপ তাঁর বিরুদ্ধে রাজনীতি করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাস জুড়ে ফ্লাডলাইট, সিসিটিভি লাগানো, বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ বন্ধরে জন্য অভিজিৎ চক্রবর্তী সেই সময় পদক্ষেপ করেছিলেন। হাইকোর্টও তাতে সায় দিয়েছিল। পড়ুয়াদের ভালো রাখতেই কঠোর পদক্ষেপগুলো করা। আন্দোলন করে তাঁকে সরানোর সঙ্গে সঙ্গে ওই নিয়মগুলোও সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান অভিজিৎ চক্রবর্তী।