এখন গালভর্তি চাপদাড়ি বা থুতনির কাছে ছুচালো দাড়ির ট্রেন্ড চলছে। কিন্তু যাদের গালভর্তি দাড়ি নেই তারা চিত্তাকর্ষক গোটি এবং সুসজ্জিত দাড়ি ও গোঁফের সাম্প্রতিক প্রবণতায় যোগ দিতে পারছেন না। তাঁদের জন্যই সুখবর। টাকে চুল গজানোর পাশাপাশি এখন শহরজুরে ধুম দু'গালে দাড়ি গজানোর। শর্ট বক্সড বিয়ার্ড-এর সখ মিটছে কলকাতার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেও। দুই গাল থেকে দাড়ি নেমে মিলে যাবে গোঁফের সঙ্গে। অনেকটা শাহরুখ খানের পাঠান লুকের মতো। ফেসিয়াল হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে।
ফেসিয়াল হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট কি?
ফেসিয়াল হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট হল একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি। মুখের যে অংশে দাঁড়ি গজায় না, তেমন অংশে চুল অর্থাৎ দাড়ি অস্ত্রপচারের মাধ্যমে রোপণ করাই এর উদ্দেশ্য। এসএসকেএম হাসপাতালের প্লাস্টিক রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অরিন্দম সরকার 'আজতক বাংলা'কে বলেন, 'এই চিকিৎসা করাতে হলে ওপিডিতে আসতে হবে। তারপর কোন ধরণের সার্জারি করাতে চান সেবিষয়ে কথা বলতে হবে। সারা ভারত জুড়েই এধরণের সার্জারির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কলকাতাতেও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। অনেকেই বিয়ার্ড ট্রান্সপ্লান্ট করাতে আসছেন।'
এসএসকেএম সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত ক'য়েকমাসে অগুনতি এরকম সার্জারি হয়েছে। যাদের বংশগত বা হরমোনঘটিত কারণে সারা গালে দাড়ি নেই, তারাই মূলত ওই সার্জারি করিয়েছেন। টাকে চুল না গজালে অনেকভাবে তা ঢাকা যায়, কিন্তু দাড়ি না গজালে তা কোনও বিকল্পে ঢাকা যায় না। তাই স্থায়ী দাড়ি গজাতে গেলে সার্জারি ছাড়া উপায় নেই। যেকারণেই মাথায় চুলের পাশাপাশি দাড়ি গজানোরও সার্জারিও বাড়ছে।
কীভাবে হয় সার্জারি?
প্রথমে জানতে চাওয়া হয় গালের কোন অংশে দাড়ি চাইছেন। তারপর সেই অনুয়ায়ী চিহ্নিত করা হয় গালের অংশ। এটাকে বলা হয় টার্গেট ফিক্সিং। এরপর গালে স্কেচপেন দিয়ে ম্যাপিং করা হয়। এরপরই শুরু হয় দাড়ি প্রতিস্থাপন। মাথার পিছন দিকের চুলই বেশিরভাগ পুঁতে দেওয়া হয় গালে। সেখান থেকেই নতুন দাড়ি গজায়। একদিনেই হয়ে যায় সার্জারি। তবে দাড়ি বেরোতে সময় লাগে প্রায় ৩ মাস।
খরচ কত?
৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে খরচ হয়। প্রকারভেদে খরচ বাড়তেও পারে। তবে সূত্রের খবর, অন্য কোনও জটিলতা না থাকলে মোটামুটি ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। বেসরকারি হাসপাতালে খরচ আরও বেশি বলেই জানা গেছে।
কী কী নিয়ম মানতে হয়?
সার্জারির পর কিছুদিন হালকা খাবার খেতে হয়। বেশি চিবোনো নিষেধ থাকে। ব্যাথা হলে পেইনকিলার দেওয়া হয়। অ্যান্টিবায়োটিকও দেওয়া হয়ে থাকে। তবে ৩ মাস দাড়ি কামানো বা কাটা যাবে না। তিম মাস পরই দাড়িতে হাত দেওয়া যাবে। তারপর সবকিছুই করা যাবে। সম্পূর্ণ দাড়ি প্রতিস্থাপনের জন্য মোট দুই থেকে আড়াই হাজার চুলের গ্রাফ্টের জন্য ৬-৮ ঘন্টা সময় লাগে। এসএসকেএম-এ এই সার্জারির খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
বিপদের ঝুঁকি?
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসক অঞ্জন চৌধুরী বিষয়টিতে বললেন, 'কলকাতায় সরকারি হাসপাতালের মধ্যে এসএসকেএম ওই সার্জারি করছে। তবে বিষয়টি আমি নিরাপদ বলে মনে করছি না। অনেক দেশে এধরণের সার্জারিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেখানে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা আলাদা। এধরণের সার্জারির পর হরমোন থেরাপি করাতে হয়। যাতে বিপদ হতে পারে।'