রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপাল সি.ভি. আনন্দ বোসের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে ফের চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর রাজ্যপাল মন্তব্য করেন, 'রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার শ্বাসরোধ করে ফেলা হয়েছে।' এর তীব্র বিরোধিতা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
উত্তরবঙ্গের নাগরাকাটায় বন্যা কবলিত এলাকায় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর উপর হামলার কয়েকদিন পরই রাজ্যপাল দিল্লি সফরে যান এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি রাজ্যের প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, অভিযোগ করেন, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এই মন্তব্যের পরেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন। দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর রাতে সাংবাদিকদের সামনে রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে বলেন, 'আমাদের এমন এক রাজ্যপাল আছেন যিনি আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হয়ে রাজ্যের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করছেন। সংবিধানের ধারা ৩৫৬ ছাড়া রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অন্য কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের দাস নয়।'
তিনি আরও কঠোর ভাষায় বলেন, 'সিভি আনন্দ বোস একজন ক্ষুদ্র আইএএস অফিসার ছিলেন। স্থায়ী কমিটিতে থাকাকালীন আমি তাঁকে চিনতাম, তখনও তাঁর কোনও উত্তর থাকত না। এখন রাজ্যপাল হয়েছেন, কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। তিনি একেবারেই এই পদের যোগ্য নন।'
কল্যাণ আরও একধাপ এগিয়ে রাজ্যপালকে 'একজন ফালতু ব্যক্তি' আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করেন, 'তিনি নৈরাজ্যবাদে জড়িয়ে পড়েছেন। সাংবিধানিক প্রথা লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক প্রচারে নেমে পড়েছেন। তাঁকে উচিত ছিল বন্যাদুর্গত এলাকাগুলিতে গিয়ে বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা এবং দিল্লিতে ফিরে গিয়ে বাংলার জন্য তহবিল দাবি করা। কিন্তু তিনি বিজেপির উচ্ছৃঙ্খলতায় মত্ত।'
তৃণমূল সাংসদের তোপের মুখে পড়ে রাজ্যপালের দফতর এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই মন্তব্য রাজ্যপাল-রাজ্য সরকারের মধ্যে চলা টানাপোড়েনকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও কটাক্ষ করে বলেন, 'এই প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রধানমন্ত্রী দেশ চালাচ্ছেন প্রতিশোধের রাজনীতির মাধ্যমে।'