একে দাবদাহ, তার ওপর ভাটায় গঙ্গার জলস্তর হু হু করে নেমে যাচ্ছে। যার জেরে বিভিন্ন এলাকায় জল সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'আমরা সর্বত্র পানীয় জল সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখার চেষ্টা করছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা নিয়মিত চালানো সম্ভব না-ও হতে পারে। তাই জলের অপচয় রুখতেই হবে।' তিনি জানান, রাস্তার ও বাড়ির কলের মুখ বন্ধ রাখতে হবে, বাড়ির জলের পাইপলাইন যেন লিক না থাকে, ট্যাংক যেন ওভার ফ্লো না হয়।
পুরসভা সূত্রে খবর, খিদিরপুরের তক্তা ঘাটে হুগলি থেকে পর্যাপ্ত জল তোলা সম্ভব হয়নি কয়েক দিন। অবশ্য, পলতায় জল প্রকল্পটি এমনভাবে তৈরি সেটি জোয়ার এবং ভাটার সময় খুব একটা জলস্তরের পরিবর্তন হয় না। তবে এর মধ্যেও গত দুই সপ্তাহে সেখানে জল তুলতে সমস্যা হয়েছে কয়েকদিন। তবে এর জন্যে উত্তর কলকাতায় হয়ত তেমন জলের সংকট দেখা দেবে না। তবে সম্প্রতি পানিহাটিতে জলসংকট দেখা দিয়েছে। ওদিকে দক্ষিণ কলকাতায় নানান জায়গায় জলের সংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়ার জন্যই কী এই সমস্যা?
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দামোদর এবং জলঙ্গীর মতো বেশ কয়েকটি নদী যা ভাগীরথী-হুগলি প্রণালীতে অবদান রাখত সেগুলি হয় শুকিয়ে গেছে বা যথেষ্ট সঙ্কুচিত হয়েছে। হুগলি এই নদীগুলি থেকে যে জল পেত, তা আর হচ্ছে না। পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, ভাটার সময় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জন্য নদী থেকে জল তুলতে অসুবিধা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের চেয়ারপার্সন কল্যাণ রুদ্র সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'হুগলিতে জলের পরিমাণে এই পতন গত কয়েক বছর ধরে স্পষ্ট ছিল। এটি প্রায় প্রতি বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে মে পর্যন্ত ঘটে।'
গত এক দশকে কলকাতা পুরসভার পানীয় জলের উৎপাদন দিনে ২৮৫ মিলিয়ন গ্যালন থেকে বেড়ে ৫১০ মিলিয়ন গ্যালন হয়েছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার আশেপাশের অন্যান্য পৌরসভার উৎপাদনও বেড়েছে। হুগলি থেকে জল তুলে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পাঠানো হয়। চাহিদা বাড়লেও হুগলিতে জলের পরিমাণ কমেছে। আগে জলস্তর বজায় রাখতে জলঙ্গী, চূর্ণী, অজয়, মাথাভাঙ্গা এবং দামোদরের মতো নদীগুলি ভূমিকা রাখত। কিন্তু সেগুলি সঙ্কুচিত হওয়ায়, জলের অভাব তৈরি হচ্ছে।