scorecardresearch
 

EXCLUSIVE: কলকাতা লাগোয়া গঙ্গা গতি পাল্টাচ্ছে? ঘোর বিপদ সামনেই? খোঁজ নিল bangla.aajtak.in

কথায় আছে, নদীর এপাড় ভাঙে আর ওপাড় গড়ে। কলকাতাতেও কি চলছে এই ভাঙাগড়া? চিন্তা বাড়ছে। কিছুদিন আগেই নিমতলা মহাশ্মশান ঘাটের একাংশে ভাঙন হয়েছে। শুধু নিমতলা ঘাট নয়, কলকাতার বিভিন্ন অংশে গঙ্গার পাড়ে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। তক্তাঘাটেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর তা নিয়ে কলকাতা পুরসভাও নড়েচড়ে বসেছে।

Advertisement
কলকাতা লাগোয়া গঙ্গা গতি পাল্টাচ্ছে? ঘোর বিপদ সামনেই? খোঁজ নিল bangla.aajtak.in কলকাতা লাগোয়া গঙ্গা গতি পাল্টাচ্ছে? ঘোর বিপদ সামনেই? খোঁজ নিল bangla.aajtak.in
হাইলাইটস
  • কলকাতার বিভিন্ন অংশে গঙ্গার পাড়ে ভাঙন তীব্র হচ্ছে
  • আর তা নিয়ে কলকাতা পুরসভাও নড়েচড়ে বসেছে

কথায় আছে, নদীর  এপাড় ভাঙে আর ওপাড় গড়ে। কলকাতাতেও কি চলছে এই ভাঙাগড়া? চিন্তা বাড়ছে। কিছুদিন আগেই নিমতলা মহাশ্মশান ঘাটের একাংশে ভাঙন হয়েছে। শুধু নিমতলা ঘাট নয়, কলকাতার বিভিন্ন অংশে গঙ্গার পাড়ে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। তক্তাঘাটেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর তা নিয়ে কলকাতা পুরসভাও নড়েচড়ে বসেছে। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকও হতে পারে। কারণ গঙ্গার ঘাটের রক্ষাণাবেক্ষণ ও দেখভালের দায়িত্ব কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের হাতে। তারাই এনিয়ে কিছু করতে পারে। কলকাতায় গঙ্গা ভাঙন নিয়ে চিন্তিত শহরবাসীও। কারণ গঙ্গার ঘাটগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু মানুষের বসতি, নানা কার্যকলাপ। বড়বাজার, স্ট্র্যান্ড রোড, কাশীপুরের মতো এলাকায় অনেক পুরনো বাড়িঘর, বড় বড় গোডাউন রয়েছে। ভাঙন না রুখতে পারলে সে সব তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। bangla.aajtak.in কথা বলল নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রর সঙ্গে। কলকাতায় গঙ্গার দুই পাড়ে আসলে কী হচ্ছে, সেটা ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।

কলকাতা কি সমূহ বিপদের মুখে?

এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছেন কল্যাণ রুদ্র। তিনি বলেন, 'কলকাতায় গঙ্গা তার গতিপথ বদলাচ্ছে, এটা ঠিক এভাবে বলা যায় না। মালদা ও মুর্শিদাবাদের সঙ্গে কলকাতার ভাঙনের কোনও তুলনা হয় না। ওই দুই জেলায় গঙ্গা নিজের গতিপথ বদলাচ্ছে। পাড় ভেঙে বহু মানুষ বাড়ি হারিয়েছেন। মালদার পাড় ভেঙে ঝাড়খণ্ডে নতুন চড় তৈরি হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের চড় ভেঙে ওপাড়ে বাংলাদেশে চড় তৈরি হচ্ছে। কলকাতার ক্ষেত্রে ভাঙন বলা যায় না। যেটা হচ্ছে কয়েকটি জায়গায় পাড় বসে যাচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ভাঙন। নদী একপাড় ভাঙে, একপাড় গড়ে, এটা আমরা জানি। নদীর একদিককে বলে কনকেভ, আরেকটা দিককে বলে কনভেক্স। কনকেভ-এ ভাঙন হয়, কনভেক্সে পলি সঞ্চয় করে। কলকাতায় গঙ্গায় জোয়ার ও ভাটা হয়। জোয়ারের জল প্রবল গতিতে আসলে কনকেভ পাড় ভাঙার প্রবণতা থাকে।' তাঁর বক্তব্য, কলকাতার জন্য এখনই ভয়ের কিছু নেই।

Advertisement


'ইংরেজ ভেবেছিল নদীটাকে যতটা সরু করা যাবে, তত জমি উদ্ধার করা যাবে'

কল্যাণ রুদ্র বলেন,'কলকাতা গড়ে উঠেছে অপরিণত বদ্বীপের উপরে। অপরিণত বদ্বীপ মানে যেটা এখনও ভাল করে গঠিত হয়নি। মাটি জমাট হয়নি। এই মাটিতে যত চাপ পড়বে তা বসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এই বদ্বীপের পাশ দিয়ে যাওয়া নদীগুলির একটা প্লাবনভূমি থাকে। জোয়ারে নদী অনেকটা চওড়া হতে চায়। এটা নদীর স্বাভাবিক ধর্ম। গঙ্গার এক পাড়ে স্ট্যান্ড রোড, আরেক পাড়ে হাওড়ায় ফোরসোর রোড। এগুলো আসলে নদীর প্লাবনভূমি। নদীকে তো আমরা প্রসারিত হতে দিতে চাই না। সেই কারণে রাস্তা এত উঁচু করে বানানো হয়েছে। নদী প্লাবনভূমিতে যে পলিটা ফেলার সুযোগ পেত সেটা পাচ্ছে না। তাই চাপ বাড়ছে। আসলে জোয়ারের জল সর্বোচ্চ যত পর্যন্ত পৌঁছয়, সেটা পর্যন্তই আসলে নদী। ইংরেজরা ভেবেছিল নদীটাকে যতটা সরু করা যাবে, তত জমি উদ্ধার করা যাবে। স্ট্যান্ড রোড অবৈজ্ঞানিক ভাবে তৈরি করা হয়েছে।'

people bathing in hooghly river, ghat near hooghly bridge, kolkata (calcutta), west bengal, india, asia - kolkata ganga aerial view stock pictures, royalty-free photos & images

ভাঙনের কারণ কী?

এই বিষয়ে কল্যাণবাবু চক্ররেলকে দুষছেন। তাঁর কথায়, 'যে জায়গাগুলিতে ভাঙন দেখা দিচ্ছে, সেখান দিয়ে চক্ররেল চলে। চক্ররেল একেবারে নদীর পাড় লাগোয়া। একটা ট্রেনের লোড আছে, তার ভাইব্রেশন আছে। যার কারণে মাটিতে খুব চাপ পড়ছে। এছাড়াও গঙ্গার দুই পাড়ের রাস্তা দিয়ে প্রচুর গাড়ি চলাচল করে, তারও একটা লোড আছে। দুই পাশে যে বিল্ডিংগুলো তৈরি হয়েছে, তার লোড আছে। ফলে কোথাও কোথাও জমি বসে যাওয়ার প্রবণতা আছে। এই বসে যাওয়ার প্রবণতাকে পাড় ভাঙার আকারে দেখছি। গঙ্গার দুই পাড়ে যত পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, সবটাই নদীর প্লাবনভূমিতে করা হয়েছে। তবে, এটা এমন নয় যে মালদা ও মুর্শিদাবাদের মতো সমস্ত পাড় ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে। এখানে গঙ্গার এত শক্তি নেই। ওখানে বেশি শক্তিশালী। মালদা ও মুর্শিদাবাদে গঙ্গা অনেক চওড়া। কলকাতায় নদী তিনশো মিটার চওড়া।  কলকাতার ক্ষেত্রে একটা ইতিবাচক দিক যে পাড়টা মিহি পলি দিয়ে গঠিত, মালদা ও মুর্শিদাবাদের ক্ষেত্রে বালি মাটি। সেই কারণে দ্রুত ভাঙে।'

boats moored on coast, princep ghat, ganges, kolkata, india - kolkata ganga aerial view stock pictures, royalty-free photos & images

ভাঙন রুখতে কাজ কারা ও কী করতে পারে?

কলকাতায় গঙ্গার ক্ষেত্রে জোয়ারের সর্বোচ্চ সীমা যা, তার চেয়ে ৪৭ মিটার পর্যন্ত কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের স্বত্বা রয়েছে। দুই পাড়ে এই জমির তারাই মালিক। এখানে কিছু করতে গেলে রাজ্য সরকার, সেচ দফতর বা কলকাতা পুরসভাকে পোর্ট ট্রাস্টের অনুমতি নিতে হবে। তাই ভাঙন প্রতিরোধের দায়িত্ব তাদেরই। কল্যাণ রুদ্রর কথায়, 'ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে কলকাতার এই ভাঙন থামিয়ে দেওয়া যাবে। এটা কোনও কঠিন কাজ নয়। প্রোটেকশন দিতে হবে। নানা পদ্ধতি আছে। দুই পাশে বোল্ডারও ফেলা যেতে পারে।'

Advertisement