কলকাতায় গুটখার পিক একটি বড় সমস্যা। গুটখা চিবিয়ে যেখানে সেখানে ভাবলেশহীনভাবে কুৎসিত লাল পিক ফেলা দেখতে দেখতে চোখ সয়ে গেছে বহু মানুষের। স্টেশন, বাজার, মল, হাসপাতাল, এমনতি মেট্রে স্টেশনকেও ছাড় দিচ্ছে না গুটখাখোরের দল। পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো হুগলি জুড়ে যাত্রী পরিষেবা শুরু করার আগেই, নতুন রুটের তিনটি স্টেশন — হাওড়া ময়দান, হাওড়া এবং মহাকরণ — গুটকা এবং পানের পিকের দাগ পড়েছে। ১৫ মার্চ বাণিজ্যিক পরিষেবা শুরু হওয়ার আগে কর্তৃপক্ষ স্টেশনগুলির দেয়াল এবং মেঝে পরিষ্কার করার জন্য ওভারটাইম কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্ল্যানেড-হাওড়া ময়দান প্রসারিত উদ্বোধন করেছিলেন। পূর্ব-পশ্চিম করিডোরে ট্রেনগুলি এখন সেক্টর ফাইভ এবং শিয়ালদার মধ্যে চলে। হাওড়া ময়দান, হাওড়া এবং মহাকরণ স্টেশনের দাগযুক্ত দেয়ালে রঙের টাটকা প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে এবং মেঝেতে গ্রানাইটগুলি ঘষে দেওয়া হচ্ছে।
এই নতুন রুট চালু হয়ে গেলে, ১৬.৬ কিলোমিটার করিডোর হাওড়া ময়দান এবং সেক্টর ফাইভ-কে সংযুক্ত করবে। হাওড়া ময়দান স্টেশনটি ২০২১ সালের জুনে এবং হাওড়া এবং মহাকরণ স্টেশন ২০২৩ সালের এপ্রিলে সম্পন্ন হয়েছিল।
কেএমআরসি জানিয়েছে, স্টেশনগুলির নির্মাণ এবং ইলেকট্রনিক, বৈদ্যুতিক এবং অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপনের সঙ্গে যুক্ত বেশকয়েকটি সংস্থার দ্বারা নিয়োগ হওয়া শ্রমিকরা ওই দাগের জন্য দায়ী। পাশাপাশই, যারা অফিসিয়াল উদ্দেশ্যে স্টেশনে যান, তারাও দায়ী। গুটকা বা পানের পিক ফেলেছে, এমন ক'য়েকজনকে কাজ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সবার ওপর তো নজরদারি সম্ভব নয়। তাই সচেতনতা বাড়াতে সাইনবোর্ড লাগানোর পরিকল্পনা করছে মেট্রো। মেট্রো কর্তৃপক্ষ স্টেশনে থুথু ফেললে একজনকে ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হতে পারে।
কলকাতায় বহুদিন ধরেই পাবলিক প্লেসে থুথু ফেলা একটি সমস্যা। হাওড়া ব্রিজও গুটখার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সেতুর ৭৮টি হ্যাঙ্গারের ভিত ক্ষয়ে গিয়েছিল গুটখার পিকে। যা সংস্কার করা হয়েছে। ২০০৭ সালে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট গুটকার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে সমস্ত হ্যাঙ্গার-বেস কভারগুলি প্রতিস্থাপন করেছিল। হ্যাঙ্গারগুলির বেসে প্রতিরক্ষামূলক ফাইবারগ্লাস কভার রাখা হয়েছে। এগুলি ধোয়া সহজ। পথচারীরা গুটকার পিক ফেলতেই থাকবে। আর তা পরিস্কার করতে হবেয। এছাড়া কোনও উপায় নেই বলে জানা গেছে।
KMRC আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে সমস্ত পেইন্টিং কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার পরেও তাদের বেশ কয়েকটি রঙের কোট লাগাতে হয়েছিল। হাওড়া ময়দান স্টেশনে দাগ মুছে ফেলার জন্য ৬ বার রঙের তাজা কোট লাগাতে হয়েছিল। হাওড়া এবং মহাকরণ স্টেশনে দু'বার রঙ করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে মেঝে থেকে দাগ সরানো।
উল্লেখ্য, হাওড়া স্টেশন সবচেয়ে বড় এবং গভীরতম। এটি ৫০,০০০ বর্গমিটার জুড়ে বিস্তৃত এবং ৩০ মিটার ভূগর্ভস্থ। মহাকরণ স্টেশনটি ২৬,০০০ বর্গমিটার এবং হাওড়া ময়দান স্টেশনটি ১৮,০০০ বর্গমিটার জুড়ে রয়েছে। স্টেশনগুলি পরিষ্কার করার জন্য ছমাস আগে কেএমআরসি এবং অন্যান্য সংস্থাগুলি প্রায় ১০০ জনকে মোতায়েন করেছিল৷ তাদের মধ্যে কয়েকজন এখনও চাকরিতে রয়েছেন।