অবস্থান স্পষ্ট করলেন RSS প্রধান
ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বাবরি মসজিদ তৈরি করতে চলেছেন। গত ৬ ডিসেম্বর বেলডাঙায় বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেছেন তিনি। এই নিয়ে সরগরম রাজ্যের পাশাপাশি গোটা দেশের রাজনীতি। বিষয়টি নিয়ে এবার মুখ খুললেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত। আরএসএস প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতায় রবিবার বক্তব্য রাখেন মোগন ভাগবত। সেখানেই প্রশ্নোত্তর পর্বে ভাগবত স্পষ্ট বলেন, এই মসজিদের নির্মাণ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরি করা হচ্ছে।
মোহন ভাগবত বলেন, 'একটা ঝগড়া চলেছিল কোর্টে। দীর্ঘদিনের শুনানির পর আদালত একটা সিদ্ধান্ত জানায়। যার ফলে মন্দির-মসজিদ ঝগড়ার সমাপ্তি হয়েছিল।' এরপরেই হুমায়ুনের প্রস্তাবিত মসজিদ নিয়ে সংঘচালক বলেন, 'ফের মসজিদ (বাবরি) নির্মাণের এই সিদ্ধান্ত হিন্দু-মুসলমানের ঝগড়াকে সামনে নিয়ে আসবে।' ভাগবতের সংযোজন, এই সিদ্ধান্ত না মুসলিমদের জন্য ভাল, না হিন্দুদের জন্য ভাল। তাঁর বক্তব্য, 'এটা একটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। এমনটা হওয়া উচিৎ ছিল না বলেই আমি মনে করি।'
প্রসঙ্গত, প্রশ্নোত্তর পর্বে হুমায়ুনের বাবরি মসজিদ নিয়ে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘একটা বিবাদ চলছিল। কিন্তু কোনও মতেই তাতে সুরাহা না মেলায় আদালতের কাছে দ্বারস্থ হতে হল। তারপর সুপ্রিম কোর্ট কী বলল? তাঁরা ওখানে রামমন্দির তৈরির জন্য় অনুমতি দিল। সুতরাং বলা যেতে পারে মন্দির-মসজিদ নিয়ে যে সংঘাত তৈরি হয়েছিল, তা এখানেই সমাপ্ত হল। তা হলে সেটিকে আবার উস্কানি দেওয়ার কি কোনও কারণ রয়েছে?’
মোহন ভাগবত আরও বলেন ধর্মনিরপেক্ষতা আর হিন্দুত্ব এক নয়। ভারতে যারাই সরকার চালিয়ে এসেছে তারাই অসাম্প্রদায়িক থেকেছে। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হল নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। তিনি আরও বলেন, 'আমরা এটা মানি যে মুসলিম সম্প্রদায় পুজার বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করতে পারেন কিন্তু দেশের ভালর বিষয়ে তারা সবাইই দেশের পক্ষে।' একইসঙ্গে মুর্শিদাবাদে প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে মোহন ভাগবত বলেছেন সংঘ মুসলিম বিরোধী এই ধরণা সম্পূর্ণ ভুল। যাঁরা কাছ থেকে সংঘকে দেখেছেন, তাঁরাই জানেন আরএসএস কোনও ধর্মের বিরোধী নয়। মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু দেশের স্বার্থে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
দিঘায় জগন্নাথ মন্দির, শিলিগুড়িতে মহাকাল মন্দির নির্মাণে সরকারের ভূমিকা নিয়ে নিজের অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন মোহন ভাগবত। তাঁর মতে সরকার আসবে, যাবে কিন্তু ধর্ম থাকবে। সরকারের কাজ ধর্মস্থান তৈরি করা নয়, বরং তার নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করা। রাজ্য সরকারের টাকায় কি মন্দির-মসজিদ তৈরি হতে পারে? এই বিষয়ে ভাগবতের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘সরকারি আধিকারিকরা এই বিষয়টি সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন। তবে আমি যতদূর জানি আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমাজতান্ত্রিক। তাই সেই সূত্র ধরে বলতে পারি, কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সরকার তৈরি করবে, এমনটা হতে পারে না।’ এই প্রসঙ্গে দু’টি উপমাও টেনে আনেন আরএসএস প্রধান। প্রথম সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের উদ্যোগে সোমনাথ মন্দিরের পুনর্নিমাণ, দ্বিতীয় রামমন্দির। ভাগবতের কথায়, ‘সর্দার বল্লভভাই প্য়াটেল সোমনাথ মন্দির বানিয়েছিলেন, ট্রাস্ট তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি ভাবে কোনও টাকা দেননি। একইভাবে, সুপ্রিম নির্দেশে রামমন্দির তৈরি হল। সরকার ট্রাস্ট গঠন করে দিল। কিন্তু টাকা দিলাম আমরা। কেন্দ্র কিন্তু এক পয়সাও খরচ করেনি। সরকার যাবে, আসবে। কিন্তু ধর্ম চিরন্তন। এটার সঙ্গে রাজনীতি জুড়ে দেওয়া উচিত নয়। অবশ্য এই প্রসঙ্গে সমস্ত নিয়ম আমার জানা নেই। আইনের ফাঁক রয়েছে, সেটা খুঁজেও মন্দির-মসজিদ তৈরি করা হয় হয়তো। তবে আমি যত দূর জানি, এটা করা যায় না।’