
রবিবার সকালে শোরগোল পরে গিয়েছিল একটি ঘটনায়। কসবার ল' কলেজের পর এবার ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে জোকার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট কলকাতাতে। জানা যায় ম্যানেজমেন্ট কলেজে তরুণীকে ঠান্ডা পানীয়র সঙ্গে মাদক মিশিয়ে খাইয়ে বেহুঁশ করে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ৷ এই ঘটনায় গ্রেফতার হন ম্যানেজমেন্ট কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র ৷ এই ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে যখন সরগরম রাজ্য তখনি ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করলেন অভিযোগকারিনীর বাবা।
সংবাদমাধ্য়মের কাছে অভিযোগকারিনীর বাবা যা দাবি করলেন, তা কার্যত ‘ইউ টার্ন’ বলা যায়। তিনি বলেন, ‘মেয়ের সঙ্গে কেউ অত্যাচার বা খারাপ ব্যবহার করেনি।’ মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়নি বলেও সংবাদমাধ্য়মের কাছে দাবি করেছেন। এদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, শুক্রবার রাত ৯:৩৪ মিনিট নাগাদ তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। তিনি জানতে পারেন, তাঁর মেয়ে অটো থেকে পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমি জানতে পারি এসএসকেএম নিউরোলজিস্ট ডিপার্টমেন্টে আমার মেয়ে ভর্তি রয়েছে। পরবর্তীকালে জানতে পারি যে হরিদেবপুর থানার পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে। মেয়ে আমাকে জানিয়েছে, ওর সঙ্গে ধর্ষণের মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি।’ জানা গিয়েছে, ওই তরুণী বাড়িতে ফেরার পর তাঁর বাবাকে জানান, তাঁর সঙ্গে কোনও যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটেনি, এমনকি শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেনি। তরুণীর বাবা আরও জানিয়েছেন, যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার সঙ্গে মেয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে তিনি আরও দাবি করেছেন, মেয়ে ঘুমিয়ে থাকার কারণে তাঁর সঙ্গে এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার করে কথা বলতে পারেননি। হরিদেবপুর থানার পুলিশ তাঁর মেয়েকে কোথা থেকে পেয়েছেন সেটাও তাঁকে জানানো হয়নি। এমনকি, থানায় যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তাও তাঁর মেয়ে করেনি।
জোকার ঘটনায় যখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় তার মধ্যে তরুণীর বাবার এমন বিস্ফোরক দাবিতে ঘুরে গিয়েছে ঘটনার মোড়। তা হলে কেন হরিদেবপুর থানায় যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তরুণী? এখনও পর্যন্ত সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি। পুলিশের হাতে যে অভিযোগপত্র রয়েছে, তাতে স্পষ্ট লেখা, জোকা ক্যাম্পাসের বয়েজ হস্টেলে তাঁকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ কর্নাটক থেকে আসা এক ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে। এই প্রশ্নের জবাবে তরুণীর বাবা বলেন, তাঁর মেয়ে কোথায় গিয়েছিল, বা কেন অভিযোগ করেছিল, তিনি জানেন না।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে জোকার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট কলেজের ক্যাম্পাসে। অভিযোগ, কলেজের হোস্টেলের ফাঁকা ঘরে নিয়ে গিয়ে তরুণীর ওপর যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে। কসবার ঘটনার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই আইআইএমের ক্যাম্পাসের মধ্যে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার পর বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছিলেন লালবাজারের কর্তারা। ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে এক ছাত্রকে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওই ছাত্রের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ হয় তরুণীর। পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। অন্যদিকে, তরুণীর বাবার এই মন্তব্য নতুন করে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে তদন্ত প্রক্রিয়া ঘিরে। মেয়েটির সঙ্গে আদৌ কোনও অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে যাচ্ছে।
এদিকে যৌন হেনস্থার ঘটনা নিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে আইআইএম কলকাতা। তদন্ত পর্বের মধ্যেই প্রয়োজন মতো পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, ‘আমাদের এক ছাত্রের সঙ্গে জড়িত একটি গুরুতর অভিযোগ সম্পর্কে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। অভিযোগকারিনী প্রতিষ্ঠানের সদস্য নন। আমরা এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি এবং তদন্তের দায়িত্বে থাকা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সম্পূর্ণরূপে সহযোগিতা করছি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া চলছে।’